চিয়া সিড এর উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন
চিয়া সিড এর উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য বা বিষয়বস্তু নিয়ে আজকের আমাদের মূল আলোচনার প্রেক্ষাপট। সাথেই আপনাদের জন্য আজকের পোস্টে আরও থাকছে, চিয়া সিড এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য যা আপনার জানা জরুরী। তাই আজকের পোস্টের সাথে থাকুন এবং পোস্টটি মনোযোগ সহকারে করুন যেন চিয়া সিড ব্যবহার সম্পর্কে শুরু থেকে শেষ সম্পূর্ণ তথ্য পেতে পারেন।
চিয়া সিড আমাদের পুষ্টি ধরনের অন্যতম একটু প্রাকৃতক উপাদান। চিয়া সিড এর উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে ধারণা অর্জন করলে চিয়া সিড সেবনে আমরা একইসাথে উৎসাহী ও চিয়া সিড এর পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া সম্পর্কে জেনে আমরা এর ব্যবহারে সচেতন হতে পারব। আজকের পোষ্টের মাধ্যমে চিয়া সিড সম্পর্কিত সকল বিস্তারিত তথ্য আপনাদের জানানোর চেষ্টা করব। আশা করি আপনারা ধৈর্য সহকারে পোস্টটি শেষ পর্যন্ত পড়বেন।
ভূমিকা
মরুভূমিতে জন্ম নেয়া এক উদ্ভিদের বীজ হলো চিয়া সিড। চিয়া সিড ক্যালসিয়ামের এক চমৎকার বাহক যা বরাবরই আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য পুষ্টিকর। এই পুষ্টি উপাদান সমৃদ্ধ উদ্ভিদ বীজ চিয়া সিড সম্পর্কিত আলোচনায় আজকে আমরা জানবো চিয়া সিড এর পুষ্টিগুণ, চিয়া সিড এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া, চিয়া সিড খাওয়ার পরিমাণ, গর্ভাবস্থায় চিয়া সিড খাওয়ার নিয়ম, চিয়া সিড এর উপকারিতা ও অপকারিতা, চিয়া বীজ খাওয়ার নিয়ম এবং ওজন কমাতে চিয়া সিড খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে।
চিয়া সিড এর পুষ্টিগুণ
পুষ্টিগুণে চিয়া সিড সর্বদা বিশ্বাসযোগ্য। চিয়া সিড এর পুষ্টির তালিকায় কেবলমাত্র ক্যালসিয়াম নয় বরং ম্যাগনেসিয়াম, আয়রন, ভিটামিন সি রয়েছে। এছাড়াও এর মধ্যে শূন্য ভাগ কলেজস্টরেলের সাথে পর্দা তো পরিমাণে শর্করা ও ক্যালরি উপাদান অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। বীজ জাতীয় খাবার যেমন চিয়া সিড হলো পুষ্টির সমাহার।
ইউনাইটেড স্টেটস ডিপার্টমেন্ট অফ অ্যাগ্রিকালচার হতে অনুমোদন করা গবেষণা অনুযায়ী, প্রতি ১০০ গ্রাম চিয়া সিড ৪৮৬ গ্রাম ক্যালোরি, ৪২.১ গ্রাম পরিমাণ শর্করা, ৩৪.৪ গ্রাম আইশঁ বা আশঁ, শতকরা ৬ ভাগ পানি, ১৬.৫ গ্রাম পরিমাণ প্রোটিন, শূন্য ভাগ চিনি ও প্রায় ৩০ গ্রাম ফ্যাট দ্বারা গঠিত। এছাড়াও একই পরিমাণ চিয়া সিড এর পুষ্টি উপাদানের মধ্যে রয়েছে ৬৩% ক্যালসিয়াম, ৮৩% ম্যাগনেসিয়াম, ৪২% আয়রন ও ২% ভিটামিন সি এবং ১১% পটাশিয়াম যার ওজন ৪০৭ মিলিগ্রাম।
অর্থাৎ, চিয়া সিডে থাকা ক্যালসিয়ামের পরিমাণ দুধে উপস্থিত ক্যালসিয়ামের তুলনায় ৫ গুণে বেশি এবং চিয়া সিড এর ভিটামিন সি এর পরিমাণ কমলা লেবুতে থাকা ভিটামিন সি এর তুলনাতে ৭ গুণ এগিয়ে আছে। আবার এতে থাকা আয়রনের পরিমাণ পালং শাক অপেক্ষা তিন গুণ বেশি এবং কলার সাথে তুলনায় কলার দ্বিগুণ পটাশিয়াম সরবরাহ করে।
চিয়া সিড এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া
সিট জাতীয় খাদ্যের মধ্যে হাজারো রোগের মহা ঔষধ হিসেবে চিয়া সিড একটি জায়গা তৈরি করেছে। এর বিভিন্ন পুষ্টি গুণের কথা বলে শেষ করা সম্ভব নয়। তবে প্রতিটি খাদ্যের অথবা ঔষধের ক্ষেত্রেও উপকারিতার পাশাপাশি কিছু পার্শ্ব প্রতিক্রিয়াও বিদ্যমান থাকে। নেমেছিয়া সিড এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত আকারে উল্লেখ করা হলো।
- কিছু কিছু ক্ষেত্রে উপকারের পাশাপাশি এটি মানুষের শরীরে এলার্জির সৃষ্টি করতে পারে।
- গ্যাসের সমস্যা হওয়ার মতো ছোটখাটো পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া হয়ে থাকে।
- পেট ফেপে আছে এমনও অনুভব হয়ে থাকে।
- আবার কিছু কিছু ক্ষেত্রে উপকারের পাশাপাশি ডায়রিয়ার সমস্যা দেখা দিতে পারে।
চিয়া সিড খাওয়ার পরিমাণ
চিয়া সিড সুপার ফুড হিসেবেও পরিচিত। সালভিয়া হিসপানিকা নামক মিন্ট প্রজাতির উদ্ভিদ থেকে এর উৎপত্তি। চিকিৎসক এবং বিশেষজ্ঞদের মতে, সুস্থ থাকার জন্য প্রতিদিন ১০০ গ্রাম করে চিয়া সিড খাদ্য তালিকার মধ্যে থাকা উচিত। তবে যদি আপনি অধিক স্বাস্থ্যের অধিকারী না হন অর্থাৎ আপনার ওজন যদি বেশি না হয়ে থাকে সেক্ষেত্রে প্রতিদিন দু চামচ অর্থাৎ ১০ গ্রাম চিয়া সিড হতে পারে আপনার জন্য অনেক বেশি উপকারী।চিয়া সিড এর উপকারিতা ও অপকারিতা
বর্তমানে চিয়া সিড এর গ্রহণযোগ্যতা বেড়ে যাওয়ায় একটি জনসম্মুখে একটি আলোচিত খাদ্যদ্রব্যের নামের মধ্যে ছড়িয়ে আছে। সবার মধ্যেই চিয়া সিড এর কৌতুহলতায় এর আলোচনা ব্যপক হলেও চিয়া সিড এর পুষ্টি গুণের ব্যাপারে অনেকেই অজানা আছেন। চিয়া সিড ব্যক্তির শরীরে বিভিন্ন রকম খনিজ উপাদান সরবরাহে সক্ষম। যেমনঃ জিংক, লৌহ, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম ইত্যাদি। চিয়া সিড ভিটামিন বি এর অনেক বড় একটি উৎস। চিয়া সিড এর উপকারিতা ও অপকারিতা নিম্নে উল্লেখ করা হলো।
উপকারিতা সমূহঃ
- চিয়া সিট খেলে অতিরিক্ত খাদ্য গ্রহণের ইচ্ছা কমে আসে যার কারণে বলা হয় চিয়া সিড খেলে ওজন কমতে সহায়তা হয়।
- এটি শরীর থেকে টক্সিক বা বিষাক্ত পদার্থ বের করতে সহায়তা করে।
- এটা ক্যান্সার প্রতিরোধেও সহায়ক ভূমিকা পালন করে থাকে।
- এটি হজম শক্তি বৃদ্ধিতে সহায়তা করে থাকে।
- শরীরে কোন প্রকার প্রদাহ জনিত সমস্যা থাকলে সেটি দূর করতেও চিয়া সিডের ভূমিকা অতুলনীয়।
- এটি একটি শক্তিবর্ধক খাদ্য হিসেবেও পরিচিত।
- যেহেতু এটি হার মজবুত করতে কার্যকরী সেহেতু হাঁটু ও জয়েন্ট এর ব্যথা ও দূর করতে সহায়ক ভূমিকা পালন করে থাকে।
- এটি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি করতে সাহায্য করে।
- শরীরের হাড় এবং দাঁত মজবুত করতেও চিয়া সিড অতুলনীয়।
- চিয়া সিডে রয়েছে ডিম এর তুলনায় তিন গুণ বেশি প্রোটিন যা নিরামিষ ভোজীদের জন্য সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে।
- চিয়া সিড শরীরের ত্বক, নখ এবং চুলের সৌন্দর্য ধরে রাখতে সাহায্য করে।
- এটি শরীরের ক্লান্তি দূর করে কর্ম ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে সহায়তা করে।
- চিয়া সিড খেলে কোলন ক্যান্সারের ঝুঁকি কমে যায়।
- চিয়া সিড খাওয়া ব্যক্তিদের ডায়াবেটিস হওয়ার ঝুঁকি অনেকাংশে কম থাকে।
- যাদের ঘুম এর সমস্যা রয়েছে তাদের জন্য চিয়া সিড ঘুমের ঔষধ হিসেবে কাজ করে অর্থাৎ ঘুম ভালো হতে সহায়তা করে থাকে।
- ওজন কমানোর উদ্যোগে সর্বপ্রথম চিয়া সিড কে স্মরণ করা হয়।
- চিয়া সিড শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে সহায়তা করে।
- এটি মস্তিষ্কের উপর খুব ভাল ভাবে ক্রিয়া করে যার কারনে স্মৃতিশক্তি বর্ধনে এর ভূমিকা অপরিসীম।
অপকারিতা সমূহঃ
- মাত্রাতিরিক্ত চিয়া সিড খেলে পেটের ব্যথার সমস্যায় ভুগতে হতে পারে।
- অতিরিক্ত চিয়া সিড খেলে স্তন ক্যান্সার এর ঝুঁকি বৃদ্ধি পায়।
- এটি অতিরিক্ত গ্রহণে অস্বাভাবিকভাবে ওজন কমিয়ে আপনাকে রুগ্ন করে তুলতে পারে।
- এটি অতিরিক্ত গ্রহণের ফলে প্রোস্টেট ক্যান্সারেরও সৃষ্টি করতে পারে।
- কিছু কিছু ক্ষেত্রে অতিরিক্ত চিয়া সিড খাওয়ার কারণে হজমেও সমস্যা হয়ে থাকে।
চিয়া বীজ খাওয়ার নিয়ম
যেহেতু চিয়া সিডে রয়েছে নানান পুষ্টি উপাদান তাই চিকিৎসকরা সুস্থ থাকার জন্য এটি নিয়মিত গ্রহণ করার পরামর্শ দিয়ে থাকেন। তবে নিয়মিত গ্রহণ করলেও একটি নিয়মের মধ্যে থেকেই গ্রহণ করতে হবে। অর্থাৎ নিয়মের বাইরে বা অতিরিক্ত কোন খাদ্যই খাওয়া উচিত নয়। কারণ এতে বিভিন্ন রকম পার্শ্ব প্রতিক্রিয়াও দেখা দিতে পারে। তাই এটি গ্রহণের পূর্বে অবশ্যই চিয়া সিড এর উপকারিতা ও অপকারিতা এবং নিয়ম সম্পর্কে জেনে নিতে হবে। এবার আসা যাক এটি খাওয়ার নিয়মে। যেহেতু এটি একটি বীজ জাতীয় খাদ্য তাই এটি বিভিন্নভাবে গ্রহণ করা যায়। নিম্নে চিয়া বীজ খাওয়ার কিছু নিয়ম সম্পর্কে আপনাদের অবগতির জন্য উল্লেখ করা হলো।
- ড্রিঙ্কস আকারে তৈরি করে পান করা যায়।
- স্মুথি বানিয়ে অনেকে এটিকে গ্রহণ করে থাকেন।
- চিয়া সিডকে আবার টক দই এর সাথেও খাওয়া যায়।
- সালাদ হিসেবেও অনেকে এটি কে গ্রহণ করে থাকে।
- পুডিং জুস স্পোর্টস স্মুথি ইত্যাদি জিনিসের সাথে মিশ্রণ করেও চেয়ে এসিড খাওয়া যায়।
ওজন কমাতে চিয়া সিড খাওয়ার নিয়ম
ওজন কমানোর জন্য যত রকমের ডায়েট আছে তার মধ্যে অন্যতম ডায়েট হচ্ছে চিয়া সীড। সাধারণত চিকিৎসকরা ওজন কমানোর জন্য চিয়া সিড খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন। তবে অবশ্যই সেটা খেতে হবে একটা নিয়মের মধ্যে। এবং দ্রুত ওজন কমানোর জন্য অতিরিক্ত পরিমাণে চিয়া সিড গ্রহণ করা থেকে বিরত থাকতে হবে।
কারণ অতিরিক্ত চিয়া সিড গ্রহণ করলে শরীরের নানান ধরনের সমস্যা দেখা দিতে পারে। তাছাড়া আমাদের সবার এটা জেনে রাখা উচিত যে, প্রতিটি জিনিস খাবার অবশ্যই একটি নিয়ম থাকে। যদি এই নিয়ম অনুযায়ী খাদ্য গ্রহণ করা হয় তবেই খাদ্যটি আমাদের শরীরকে সঠিক পুষ্টি প্রদান করবে।
চিয়া সিড খাওয়া শরীরের জন্য অনেক উপকারী তবে ওজন কমানোর জন্য চিয়া সিট খাওয়ার একটি সঠিক নিয়ম রয়েছে। দ্রুত ওজন কমানোর জন্য প্রতিদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে খালি পেটে ও রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে এক গ্লাস পানিতে দু চামচ লেবুর রস এবং দু চামচ চিয়া সীড মিশ্রিত করে সেই মিশ্রণটি খেতে হবে।
মিশ্রণটি তৈরির পূর্বে অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে যেন, চিয়া সিড সাধারণ তাপমাত্রার পানিতে অন্ততপক্ষে ৩০ মিনিট ভেজানো থাকে। কারণ এতে করে প্রোটিনের পরিমাণ বৃদ্ধি হওয়ায় ঘনঘন ক্ষুধার নিবারণ হয়। ওজন কমানোর ক্ষেত্রে চিকিৎসকগণ প্রতিদিন ১০০ গ্রাম চিয়া সিড খাওয়ার উপদেশ দিয়ে থাকেন।
লেখকের মন্তব্য
আশা করি আজকের পোষ্টের মাধ্যমে চিয়া সিড এর উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত বিষয়বস্তু জানতে পেরেছেন। উপরোক্ত আজ আলোচনার প্রেক্ষাপটে আপনাদের যদি কোন প্রশ্ন বা মতামত থেকে থাকে তাহলে অবশ্যই আমাদের কমেন্ট বক্সে কমেন্ট করুন। এবং আমাদের পোস্টটি শেয়ারের মাধ্যমে অন্য সবাইকেও চিয়া সিড সম্পর্কে বিস্তারিত জানার সুযোগ করে দিন।
ধন্যবাদ
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url