রক্তশূন্যতা দূর করার ঘরোয়া উপায় সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য জানুন

রক্তশূন্যতা দূর করার ঘরোয়া উপায় সম্পর্কে বিস্তারিত বিষয়বস্তু নিয়েই আমাদের আজকের মূল আলোচনা। সাথেই আপনাদের জন্য আরো থাকছে রক্তশূন্যতার লক্ষণ সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য। তাই আজকের পোস্টটি আপনি সম্পূর্ণ মনোযোগ সহকারে পড়ুন যেন এর সম্পর্কে বিশদ তথ্য পেতে পারেন।
রক্তশূন্যতা দূর করার ঘরোয়া উপায় সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য জানুন
রক্তশূন্যতা সম্পর্কে আপনারা অনেকেই জানেন। তবে এর সম্পর্কে বিশদভাবে হয়তো অনেকেরই আবার জানা নেই। যার কারণে তারা অনেকেই বুঝতে পারেন না যে একজন ব্যক্তির জন্য রক্তশূন্যতা কতটুকু মারাত্মক আকার ধারণ করতে পারে। তাই আমাদের আজকের পোষ্টের মাধ্যমে রক্তশূন্যতা দূর করার ঘরোয়া উপায় সম্পর্কে সবকিছুর বিস্তারিত তথ্য আপনাদেরকে জানানোর চেষ্টা করব। আশা করি আপনারা ধৈর্য সহকারে পোস্টটি শেষ পর্যন্ত পড়বেন।

ভূমিকা

রক্তশূন্যতা হচ্ছে এমন একটি রোগ যা কমবেশি অনেকেরই হয়ে থাকে। রক্তশূন্যতা দীর্ঘমেয়াদিও হতে পারে আবার অল্প মেয়াদিও হতে পারে ঠিক তেমনিভাবেই এটি স্বাভাবিক থেকে শুরু করে গুরুতর আকারও ধারণ করতে পারে। তাই রক্তশূন্যতা সম্পর্কে বিস্তারিত ধারণা কমবেশি সবারই থাকা উচিত।

তাহলে চলুন আজকের এই পোস্টে আমরা রক্তশূন্যতা কি, রক্তশূন্যতা কেন হয়, রক্তশূন্যতার লক্ষণ, শরীরের রক্ত কম হলে কি কি সমস্যা হয়, কোন সবজি খেলে রক্ত হয়, কোন মাছ খেলে শরীরে রক্ত হয়, রক্তশূন্যতা দূর করার ঘরোয়া উপায় এবং হিমোগ্লোবিন কত হলে রক্ত দিতে হয় তা জেনে নেই।

রক্তশূন্যতা কি

যখন শরীরে রক্তের লোহিত রক্তকণিকা বা হিমোগ্লোবিনের সংখ্যা স্বাভাবিকের চেয়ে কম হয়ে থাকে বা রক্তে উপস্থিত অক্সিজেন বহন করার ক্ষমতা কমে যায় তখন তৈরি হয় রক্তশূন্যতা নামক রোগ। লোহিত রক্তকণিকা হচ্ছে রক্তের একটি বিশেষ উপাদান যাতে রয়েছে হিমোগ্লোবিন নামক বিশেষ ধরনের একটি রঞ্জক পদার্থ। এবং এই রঞ্জক পদার্থ বা হিমোগ্লোবিন যখন লিঙ্গ ভেদে এবং বয়স ভেদে স্বাভাবিকের তুলনায় কমতে শুরু করে তখন যে রোগটি হয় সেই রোগটি হচ্ছে রক্তশূন্যতা বা অ্যানিমিয়া।

রক্তশূন্যতা কেন হয়

সাধারণত শরীরে আয়রনের ঘাটতি হলে তখন রক্তশূন্যতা দেখা দেয়। তাছাড়া শরিরের লোহিত কণিকা ভেঙে গেলেও রক্তশূন্যতা হয়ে থাকে। কখনো কখনো শরীরের অভ্যন্তরীণ ক্ষত থেকে রক্তক্ষরণ হওয়ার কারণেও রক্তশূন্যতা হতে পারে।

আবার শরীরে যদি দীর্ঘস্থাই কোন রোগ হয়ে থাকে যেমন কিডনি অথবা লিভার বিকল হয়ে যাওয়া, আর্থ্রাইটিস, ক্যান্সার থাইরয়েড গ্রন্থির নানা সমস্যা, যক্ষা সহ নানা ধরনের রোগ হলেও রক্তশূন্যতা হয়ে থাকে। হিমোগ্লোবিনের নিজস্ব কিছু রোগ থ্যালাসেমিয়া সহ আরো অসংখ্য রোগেও রক্তশূন্যতার আশঙ্কা থাকে বা রক্তশূন্যতা হয়ে থাকে।

যদিও বা সারা পৃথিবীতে সবচেয়ে বেশি আয়রনের ঘাটতির কারণেই রক্তশূন্যতা হয়ে থাকে। এবং আয়রনের অভাবের হয়ে থাকা রক্তশূন্যতার কারণ হচ্ছে পেটটিক আলসার, অপুষ্টি, কৃমির সংক্রমণ, স্টেরয়েডের ফলে পাকস্থলীর ক্ষত, ঘন ঘন গর্ভধারণ এবং বেদনাদায়ক ঔষধ সেবন করা। তবে রক্তশূন্যতা দূর করার ঘরোয়া উপায় জানা থাকলে এর থেকে প্রাথমিক ভাবে মুক্তি সম্ভব।

রক্তশূন্যতার লক্ষণ

রক্তশূন্যতা এমন একটি রোগ যাতে দীর্ঘদিন ভুগলেও অনেকেই টের পান না। একমাত্র রক্ত পরীক্ষা করলে তখনই সবাই জানতে পারে যে রক্তশূন্যতা হয়েছে। কিন্তু আজ কিছু লক্ষণ আপনাদের সাথে শেয়ার করব যাতে করে আপনারাও জানতে পারেন যে রক্তশূন্যতা হলে কি কি হয়ে থাকে বা এর লক্ষণ কি কি। নিম্নে রক্তশূন্যতার লক্ষণ সম্পর্কে কিছু বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।

  • ১. রক্তশূন্যতায় আক্রান্ত রোগীকে বিষন্নতায় ভুগতে দেখা যায়।
  • ২. রক্তশূন্যতায় আক্রান্ত ব্যক্তি ছোট থেকে ছোট কাজ করেও হাঁপিয়ে যায় বা মাত্রাতিরিক্ত ক্লান্ত হয়ে যায়।
  • ৩. ছোটখাটো কাজ করেও অনেক সময় শ্বাসকষ্ট দেখা দেয়।
  • ৪. সব সময় মাথা ব্যথা হওয়া এবং দুর্বলতা অনুভব করাও রক্তশূন্যতার একটি অন্যতম লক্ষণ।
  • ৫. অতিরিক্ত চুল পড়ার সমস্যা। যেহেতু রক্তস্বল্পতা আয়রনের ঘাটতির কারণে হয় সেহেতু প্রচুর পরিমাণে চুল পড়তে থাকে।
  • ৬. রক্তশূন্যতা যদি নারীদের ক্ষেত্রে হয় সে ক্ষেত্রে অনিয়মিত মাসিক হতে পারে।
  • ৭. শরীরের ত্বক এবং চোখের রং ফ্যাকাসে হয়ে পড়ে।
  • ৮. অনেক ক্ষেত্রে রক্তশূন্যতা হলে হাত পা ঠান্ডা হয়ে যাওয়ার প্রবণতাও দেখা যায়।
  • ৯. রক্তশূন্যতা হলে অনেক সময় জিহ্বায় ঘা হওয়া, ঠোঁটের কোণে ক্ষত হওয়া, চুলের আগা ফাটা, নখফাটা লক্ষ্য করা যায়।
  • ১০. রক্তশূন্যতা হলে হৃদপিণ্ড শরীরে পর্যাপ্ত পরিমাণে রক্ত সঞ্চালনের জন্য পাম্প করতে পারে না ফলে হৃদস্পন্দন স্বাভাবিকের তুলনায় অনেকটাই বেশি হয়ে যায় অর্থাৎ বেড়ে যায়।

কোন মাছ খেলে শরীরে রক্ত হয়

সাধারণত প্রায়ই চিকিৎসক রক্তশূন্যতায় আক্রান্ত ব্যক্তিদেরকে খাবারের দিকে খেয়াল রাখার কথা বলে থাকেন যার মধ্যে মাছ অন্যতম। তাহলে এমন কোন মাছ খেতে হবে যাতে করে শরীরের রক্ত বৃদ্ধি হতে শুরু করবে। শরীরের রক্ত বৃদ্ধি করতে মাছের মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে মাগুর মাছ, জিওল মাছ এবং সামুদ্রিক মাছ।

চিকিৎসকেরা বলেন, ১০০ গ্রাম মাগুর মাছে আছে ৮৬ ক্যালরি, ১৫ গ্রাম প্রোটিন, ২১০ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম, ২৯০ মিলিগ্রাম ফসফরাস ও শূন্য দশমিক ৭ মিলিগ্রাম আয়রন। এবং দেশি মাগুর মাছে শরীরের জন্য উপযোগী লৌহ অধিক পরিমাণে পাওয়া যায়। রক্তশূন্যতা দূর করার ঘরোয়া উপায়গুলোর মধ্যে এটি অন্যতম একটি উপায়।

রক্তশূন্যতা দূর করার ঘরোয়া উপায়

আমাদের আপনাদের বাড়িতেই রয়েছে রক্ত শূন্যতার হাত থেকে বাঁচার উপায়। তাই ঘরোয়া উপায়ে রক্তশূন্যতা দূর করার জন্য বা রক্তশূন্যতা থেকে মুক্তির জন্য নিম্নে কিছু খাবারের নাম উল্লেখ করা হলো।

  • ১. রক্ত উৎপাদনের জন্য খাদ্যের কথা ভাবলে সর্বপ্রথম পর্যায়ে আসে বিট রুট যা ফল এবং সবজি দুই ভাবেই খাওয়া যায়। এটিকে আয়রনের সবচেয়ে বড় উৎস হিসেবে ধরা হয়।
  • ২. ড্রাই ফ্রুটস বা শুকনো ফল যেমন- কিসমিস, খুবানি বা এপ্রিকট এসবই রয়েছে প্রচুর পরিমাণে আয়রন এবং ভিটামিন। এ সকল খাবার রক্তের হিমোগ্লোবিনের মাত্রা খুব দ্রুতগতিতে বাড়াতে সাহায্য করে।
  • ৩. শিশুদের খুব পছন্দের একটি খাবার ডার্ক চকলেটেও আছে প্রচুর পরিমাণে আয়রন।
  • ৪. ডিমে রয়েছে উচ্চমাত্রায় আয়রন এবং অন্যান্য পুষ্টি উপাদান। ডিমের হলুদ রঙের কুসুম যাতে আছে প্রচুর পরিমাণে খনিজ পুষ্টি এবং ভিটামিন। যার কারণে দুর্বলতায় ভুগছেন এমন ব্যক্তিদের প্রতিদিনের খাবার তালিকাতে অন্ততপক্ষে একটি সিদ্ধ ডিম অবশ্যই রাখতে বলা হয়ে থাকে।
  • ৫. আয়রন এবং অন্যান্য খনিজ পুষ্টি উপাদানে ভরপুর একটি খাদ্য হচ্ছে সামুদ্রিক খাদ্য। এসব খাদ্যে পাওয়া যায় প্রচুর পরিমাণে আইরন এবং অন্যান্য বিভিন্ন রকমের খনিজ ও পুষ্টি উপাদান যা শরীরের দ্রুত রক্ত বৃদ্ধি করতে অনেক বেশি সহায়তা করে।
  • ৬. প্রতিদিনের খাবারের তালিকায় রাখতে হবে আইরন যুক্ত তাজা সবজি। যেমন- টমেটো, মিষ্টি কুমড়া, বিটরুট, আলু, ব্রকলি। এছাড়াও রয়েছি স্পিনাক সহ অন্যান্য আরো সবজি যা আয়রনের পরিপূর্ণ।
  • ৭. মানব দেহের জন্য অত্যন্ত উপকারী অন্যতম একটি খাবার হচ্ছে বাদাম। যেকোনো ধরনেরই বাদাম মানব দেহের জন্য অত্যন্ত উপকারী বলে চিকিৎসকরা জানান। এজন্য প্রতিটি ব্যক্তির প্রতিদিন চিনা বাদাম, কাজুবাদাম, হিজলি বাদাম, কাঠবাদাম এবং আখরোট খাওয়া উচিত। এবং রক্তশূন্যতায় আক্রান্ত ব্যক্তির জন্য এটি মহা ঔষধ বলে বিবেচিত। কারণ এটি রক্তে হিমোগ্লোবিনের পরিমাণ খুব দ্রুত গতিতে বাড়াতে সাহায্য করে।
  • ৮. প্রাণিজ প্রোটিন রক্তে হিমোগ্লোবিনের পরিমাণ দ্রুত বাড়াতে সহায়তা করে। তাই খাবারের তালিকায় রাখতে হবে সকল ধরনের লাল রঙের মাংস। লাল মাংস বলতে, গরুর মাংস খাসির মাংস এবং কলিজাকে আয়রনের বিশাল এক উৎস হিসেবে ধরা হয়। তবে যদিও বা মুরগির মাংস লাল মাংস না তারপরও এতে রয়েছে আয়রন সরবরাহের অন্যতম উৎস। আইরন এবং হিমোগ্লোবিন উৎপাদনের জন্য এ সকল খাদ্য রক্তশূন্যতায় আক্রান্ত রোগীকে অবশ্যই খাওয়াতে হবে।
  • ৯. আয়রনের অন্যতম আরও একটি উৎস হচ্ছে সয়াবিন ছোলা এবং বিন জাতীয় খাদ্য। বর্তমানে নিরামিষভুজিদের অন্যতম প্রিয় একটি খাদ্য হচ্ছে সয়াবিন। এসব খাদ্যের মাধ্যমেও রক্তে হিমোগ্লোবিনের পরিমাণ দ্রুত গতিতে বৃদ্ধি পায়।
  • ১০. এছাড়াও গম, বার্লি, ওটস, তিল এবং চাল হচ্ছে আয়রনের অসাধারণ একটি উৎস। তবে চালের মধ্যে বিশেষ করে লাল চালে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে আয়রন।
  • ১১. কিছু কিছু ফলেও রয়েছে প্রচুর পরিমাণে আয়রন যেমন- ড্রাগন। রক্তশূন্যতায় আক্রান্ত রোগীদের কে চিকিৎসকরা সবসময় বেশি করে ড্রাগন ফল খাওয়ার উপদেশ দিয়ে থাকেন।
  • ১২. যেহেতু ভিটামিন সি দেহের ভেতরে আয়রনকে দ্রুত শুষে নিতে সাহায্য করে তাই এ সময় অর্থাৎ রক্তশূন্যতা হলে ভিটামিন সি জাতীয় খাদ্যকেও খাবারের তালিকা তে রাখতে হবে।

হিমোগ্লোবিন কত হলে রক্ত দিতে হয়

সাধারণত নারী এবং পুরুষদের হিমোগ্লোবিনের পরিমাণ আলাদা আলাদা হয়ে থাকে। প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষদের ক্ষেত্রে হিমোগ্লোবিনের স্বাভাবিক পরিমাণ হচ্ছে ১৩.৫ থেকে ১৭.৫ গ্রাম প্রতি ডিসি লিটার। এবং প্রাপ্তবয়স্ক নারীদের ক্ষেত্রে হিমোগ্লোবিনের স্বাভাবিক পরিমাণ হচ্ছে ১২ থেকে ১৫.৫ গ্রাম প্রতি ডিসি লেটার।

যখনই হিমোগ্লোবিন স্বাভাবিক মাত্রার থেকে অনেক বেশি পরিমাণে কম হয়ে যায় সাধারণত তখনই রক্ত দেয়ার প্রয়োজনীয়তা লক্ষ্য করা যায়। যদিও বা শরীরে রক্ত দেয়ার জন্য অবশ্যই একজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক দ্বারা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করাতে হবে এবং পরামর্শ নিতে হবে। তাছাড়া গর্ভবতী নারীদের ক্ষেত্রেও হিমোগ্লোবিনের পরিমাণ যখন অনেকাংশ কমে যায় তখন চিকিৎসকরা রক্ত দেয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন।

লেখকের মন্তব্য

আশা করি আজকের পোষ্টের মাধ্যমে আপনারা রক্তশূন্যতা দূর করার ঘরোয়া উপায় সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য জানতে পেরেছেন। তবে আপনার অথবা আপনার পরিবারের বা পরিচিত কারো যদি রক্তশূন্যতা হয়ে থাকে তবে সর্বপ্রথম অভিজ্ঞ চিকিৎসকের কাছে গিয়ে পরামর্শ নিতে হবে। উপরোক্ত আলোচনার প্রেক্ষাপটে আপনাদের যদি কোন প্রশ্ন বা মতামত থাকে তাহলে অবশ্যই আমাদের কমেন্ট বক্সে কমেন্ট করুন। এবং আমাদের পোস্টটি শেয়ারের মাধ্যমে অন্য সবাইকেও রক্তশূন্যতা সম্পর্কে বিস্তারিত জানার সুযোগ করে দিন।
ধন্যবাদ

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url