রক্ত দানের উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য

রক্ত দানের উপকারিতা ও অপকারিতার বিষয়বস্তু নিয়ে আজকে আমাদের এই পোস্টে আপনাদের জন্য বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। আজকের এই পোষ্টে আরো থাকবে রক্তদানের যোগ্যতা সম্পর্কিত কিছু তথ্য। তাই এই পোস্টটির সঙ্গে থাকুন এবং পোস্টটি মনোযোগ সহকারে পড়ুন যেন রক্তদান সম্পর্কিত বিস্তারিত তথ্য জানতে পারেন।
নবীন থেকে শুরু করে প্রবীণ পর্যন্ত রক্তদানের কর্মসূচি সম্পর্কে সকলেই কমবেশি জানেন। তবে রক্ত দানের উপকারিতা ও অপকারিতা বা এই কর্মসূচির পূর্ববর্তী ও পরবর্তী করণীয় সম্পর্কে অনেকের সঠিক ধারণা জানা নেই। ফলে অনেক ক্ষেত্রে রক্তদানের পরবর্তী সময়ে নেতিবাচক প্রভাব দেখা দেয়। তাই আজকের আমাদের এই পোস্টের মাধ্যমে রক্ত দানের যোগ্যতা ও রক্তদান করার জন্য কি কি করা উচিত তা আপনাদেরকে বিস্তারিতভাবে জানানোর চেষ্টা করব।

ভুমিকা

রক্তদানের প্রসঙ্গ সম্পর্কে জানা নেই এমন লোক আমাদের আশেপাশে খুঁজে পাওয়া কঠিন। প্রতিটি মানুষেরই রক্তদান কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করা অন্ততপক্ষে তার নিজস্ব শরীরের জন্য খুবই ভালো। এবং প্রতিটি মানুষেরই রক্তদান করার জন্য রক্তদান সম্পর্কে বিস্তারিত সবকিছুই জেনে রাখা ভালো। তাই আজকের আমাদের এই পোস্টে আমরা রক্ত দানের গুরুত্ব, রক্ত দানের যোগ্যতা, ১ ব্যাগ রক্ত দিতে কত সময় লাগে, রক্ত দেওয়ার আগে কি খাওয়া উচিত, রক্ত দানের উপকারিতা ও অপকারিতা, রক্ত দেওয়ার পর করণীয়, রক্ত দানের পর কি কি খেতে হয় তার সম্পর্কে জানব।

রক্ত দানের গুরুত্ব

প্রাপ্তবয়স্ক সুস্থ মানুষ যখন স্বেচ্ছায় রক্ত প্রদান করে তাকে রক্তদান কর্মসূচি বলা হয়। রক্তদানের অনেক গুরুত্ব রয়েছে। রক্তদাতারা রক্ত দানের মাধ্যমে অনেক প্রান বাঁচাতে সহায়ক হতে পারে। প্রতিটি ব্যক্তি তার জীবদ্দশায় অগণিত মানুষের স্বাস্থ্যের উন্নতির ক্ষেত্রে সহায়তায় ভূমিকা রাখতে পারে। একজন সুস্থ মানুষের দান করা রক্ত প্রয়োজন হতে পারে অনেক অসুস্থ ব্যক্তিদের।

প্রতিবছর এমন অনেক ঘটনা ভেসে ওঠে যেখানে দেখা যায় চিকিৎসায় প্রয়োজনীয় রক্তের অভাবে মারা যাচ্ছে কিংবা অসুস্থ অবস্থাতেই থেকে যাচ্ছে অগণিত মানুষ। একজন সুস্থ মানুষের রক্ত দান করার কর্মসূচিতে কেবলমাত্র রক্ত গ্রহীতাই ফলপ্রাপ্ত হয় না, বরং নিয়মিত রক্তদানের ফলে রক্ত দানকারীর অস্থিমজ্জাতে রক্তকণিকার উৎপাদন সচল হয়ে যায় এবং রোহিত রক্তকণিকা উৎপাদনের হার বৃদ্ধি পায় অর্থাৎ শরীরের রক্ত সঞ্চালন ক্ষমতা বৃদ্ধি পেয়ে যায়।

নিয়মিত রক্তদানের ফলে বিভিন্ন মারাত্নক রোগ ব্যাধির ঝুঁকি হ্রাস পায়। রক্তদানের অসংখ্য উপকারিতা রয়েছে। রক্তদানের ফলে রক্তদাতার নিজস্ব রক্ত আয়রনের জমাট বাঁধার ঝুঁকি কমে এবং রক্ত সঞ্চালন অবস্থা স্বাভাবিক থাকায় কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে থাকে যার ফলে রক্তচাপ জনিত সমস্যাও নিয়ন্ত্রণে থাকে। যেহেতু রক্ত দানের উপকারিতা ও অপকারিতার মধ্যে উপকারিতাটাই বেশি পরিলক্ষিত হয় তাই রক্তদানের ক্ষেত্রে মানুষ এখন খুব বেশিই অগ্রসর হচ্ছে।

উন্নত বিশ্বের অধিকাংশ ক্ষেত্রে সেখানকার ব্যক্তিরা স্বেচ্ছায় রক্ত দান করে থাকেন। অন্যান্য ক্ষেত্রে সমাজসেবামূলক সংস্থা থেকে স্বেচ্ছাসেবক কিংবা সাধারণ জনজীবনে ব্যস্ত ব্যক্তিবর্গরা রক্ত দান করে থাকেন। রক্তদান এক বিরাট মানবিক আচরণ। তাই বর্তমানে রক্ত দান কর্মসূচি একটি সামাজিক কর্মসূচির আকার ধারণ করেছে এবং সাধারণ জনগণের মাধ্যমে এই কর্মসূচি গ্রহণযোগ্যতাও পাচ্ছে।

রক্ত দানের যোগ্যতা

রক্তদানের মতো একটি সামাজিক ও স্বেচ্ছাসেবী কার্যক্রম কেবলমাত্র প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তিবর্গের দ্বারা চলমান। শারীরিক ও মানসিকভাবে সুস্থ যেকোনো প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তি রক্তদান করতে পারেন। তবে রক্তদান করার কিছু নিয়ম বা শর্ত রয়েছে যা মেনে নিয়েই রক্তদান করা সম্ভব। রক্ত দানের কিছু যোগ্যতা হলো-

  • রক্ত দানকারী ব্যক্তিকে অবশ্যই প্রাপ্তবয়স্ক হতে হবে। রক্তদাতার বয়স সীমা হতে হবে ১৮-৬০ বছর পর্যন্ত।
  • রক্ত দাদাকে অবশ্যই শারীরিকভাবে ও মানসিকভাবে সুস্থ সবল হতে হবে।
  • রক্তশূন্যতায় ভুগছে এমন ব্যক্তি রক্ত দানের যোগ্যতা রাখেন না।
  • সর্বনিম্ন ৪৫ কেজি থেকে শুরু করে ৫০ কেজি বা তার বেশি ওজনধারী ব্যক্তি রক্ত দান করার যোগ্যতা রাখেন। অর্থাৎ যথার্থ ওজনের চেয়ে কম ও যেন থাকা ব্যক্তি বা অতিরিক্ত ওজনধারী ব্যক্তি রক্ত দিতে পারেন না।
  • সম্প্রতি রক্ত প্রদান করার সাথে সাথেই পুনরায় রক্তদান করা সম্ভব না। অন্ততপক্ষে তিন থেকে চার মাস অন্তরে রক্ত দান কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করতে পারবেন।
  • রক্তে হিমোগ্লোবিনের পরিমাণ কম না বেশি থাকলে রক্তদান করা যায় না তাই মহিলাদের ক্ষেত্রে রক্তে হিমোগ্লোবিনের পরিমাণ সর্বনিম্ন ১১ গ্রাম এবং পুরুষের ক্ষেত্রে হিমোগ্লোবিন সর্বনিম্ন ১২ গ্রাম হতে হবে।
  • শ্বাস-প্রশ্বাস জনিত সমস্যা কিংবা শরীরের অস্বাভাবিক তাপমাত্রাজনিত চিহ্ন না থাকলে রক্তদান করা যাবে। এক্ষেত্রে রক্তদানকারীর শরীরের তাপমাত্রা ৯৯.৫ ফারেনহাইটের থাকতে হবে এবং নাড়ির গতি ৭০-৯০ হতে হবে।
  • গর্ভবতী নারী এবং সন্তান প্রসবের পরবর্তী এক বছর পর্যন্ত নারীরা রক্তদান করতে পারবেন না। এছাড়াও ঋতুস্রাব চলাকালীন রক্তদান করা থেকে বিরত থাকতে হয়।
  • চিকিৎসাধীন ব্যক্তির রক্তদান প্রক্রিয়া ঝুঁকিপূর্ণ হয় তাই তারাও চিকিৎসাধীন সময়কালীন রক্তদাতা হতে পারেন না।

১ ব্যাগ রক্ত দিতে কত সময় লাগে

প্রতি বছর বিভিন্ন দেশের বিভিন্ন জায়গায় রক্তের অভাবের কারণে মানুষের প্রাণ সংকটাচ্ছন্ন হয়ে পড়ে। জানা অবশ্যক যে, মানবদেহে সাধারণত প্রায় সাড়ে পাঁচ থেকে ছয় লিটার রক্ত থেকে থাকে। রক্তের ব্যাগের প্রতি এক ব্যাগে রক্ত থাকে প্রায় ৩৫০ থেকে ৪৫০ মিলিমিটার সমপরিমাণ। অর্থাৎ যদি রক্তের ব্যাগ প্রতি হিসাব করা হয় তাহলে মানবদেহে ১৩ থেকে ১৫ ব্যাগ সমপরিমাণ রক্ত থাকে।

এবং একদিকে যেমন প্রতি এক ব্যাগ রক্ত তৈরি করতে একজন সুস্থ সবল মানুষের সময় লাগে প্রায় দুই থেকে তিন দিন। সেখানে অন্যদিকে এক ব্যাগ রক্ত দিতে মাত্র ১০ থেকে ১২ মিনিট এর মত সময় লাগে। এই কয়েকটা মিনিট সময়ের মধ্যেই একটা প্রাণ বেঁচে ওঠে।

রক্ত দেওয়ার আগে কি খাওয়া উচিত

রক্ত দান করা অবশ্যই একটি মহৎ কাজ কিন্তু এই মহৎ কাজটি করতে গিয়ে নিজের শরীরের দিকেও খেয়াল রাখাটা খুব জরুরী। তাই আপনি যদি রক্ত দান করতে চান তাহলে আপনাকে রক্তদানের অন্তত দুই থেকে চার ঘন্টা আগে থেকেই কিছু পুষ্টিকর খাবার এবং হাফ লিটার পানি পান করতে হবে। রক্ত দান করার আগে পুষ্টিকর খাবার বলতে দুধ, ডিম, ড্রাগন ফল ইত্যাদি আয়রন জাতীয় খাদ্য খাওয়া উচিত। যেন রক্তদানের পর কোনরকম দুর্বলতা জাতীয় পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া দেখা না দেয়।

রক্ত দানের উপকারিতা ও অপকারিতা

আমাদের মধ্যে এমন অনেকেই আছেন যারা মনে করেন রক্ত দিলে তাদের শরীর দুর্বল হয়ে পড়বে অথবা কোনরকম ক্ষতি হয়ে যাবে বা তাদের শরীরের রক্ত কমে যাবে। তবে আসলে এমন কিছুই হয় না। নিম্নে রক্ত দানের উপকারিতা ও অপকারিতা সমূহ আপনাদের জানার সুবিধার্থে উল্লেখ করা হলো।

  • সর্বপ্রথম যে উপকার হয় তা হচ্ছে আপনার দেওয়া রক্তের কারণে অনেক মানুষের জীবন বাঁচানো যেতে পারে।
  • আপনার শরীরে অপ্রত্যাশিত কোন রোগ থাকলে রক্তদানের মাধ্যমে সেই রোগ থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব হয়ে ওঠে।
  • শরীরের রক্তে কোন প্রকার জীবাণু যদি থেকে থাকে তা রক্তদানের সময় বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে জানা যায়।
  • নিয়মিত রক্তদান করলে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও বৃদ্ধি পায়।
  • নিয়মিত রক্তদান করলে ডায়াবেটিস থেকে শুরু করে উচ্চ রক্তচাপ উচ্চ কলেজস্টরেল হার্টের রোগের ঝুঁকি কমে যায়।
  • রক্তদানকারী ব্যক্তির যদি আগে থেকেই তো কলেজস্টরেল থাকে তাহলে নিয়মিত রক্তদানের মাধ্যমে কলেজ স্টারলের মাত্রা কমে যায়।
  • রক্ত দান করে তাদের জন্য সবচাইতে বেশি ভালো যাদের রক্তে আয়রনের জমাট বাঁধার প্রবণতা বেশি থাকে।

রক্তদানের ক্ষেত্রে দীর্ঘমেয়াদী বা স্বল্পকালীন কোন প্রকারের কোন অপকারিতা নেই। তাই প্রত্যেকেরই নিশ্চিন্তে রক্তদান কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করা সম্ভব।

রক্ত দেওয়ার পর করণীয়

একজন ব্যক্তি রক্ত দান করার পর তা নিজের শরীরে কিছুটা হলেও দুর্বলতা চলে আসে। তাই রক্ত দেয়ার পরপরই একটু সময় ধরে বিশ্রাম নেয়া উচিত। কখনোই রক্ত দেওয়ার সাথে সাথে উঠে দাঁড়ানো বা বাইরে বের হওয়ার চেষ্টাও করা যাবে না। এতে করে মাথা ঘুরে পড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়। যে আপনার জন্য ক্ষতির একটি কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে। তাই রক্ত দেয়ার পরপর কিছুক্ষণ বিছানাতেই শুয়ে থাকা উচিত।

রক্ত দানের পর কি কি খেতে হয়

প্রথমত রক্তদানের পর কিছু সময় বিছানাতে শুয়ে থেকে বিশ্রাম করা উচিত। তারপর অন্ততপক্ষে দুই গ্লাস পানি অথবা জুস খাওয়া উচিত। কারণ এতে করে রক্তে থাকা জলীয় অংশটুকু কিছুটা হলেও পূরণ হয়ে যায়। যেহেতু আমরা জানি রক্ত তৈরি করতে প্রচুর মাত্রায় আয়রনের প্রয়োজন। তাই রক্তদানের পর অবশ্যই আয়রন জাতীয় খাবারগুলো খাবারের তালিকায় রাখতে হবে এবং খেতে হবে। ডিম, দুধ, কলা, কলিজা, বিভিন্ন ধরনের কচু এবং কচুর শাক ইত্যাদি অবশ্যই খেতে হবে।

লেখকের মন্তব্য

আশা করি আজকের রক্তদান সম্পর্কিত আলোচনাভিত্তিক পোষ্টের মাধ্যমে আপনারা রক্ত দানের উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য জানতে পেরেছেন। তবে আপনার অথবা আপনার পরিবারের বা আপনার পরিচিত কারো যদি রক্তদান সম্পর্কিত কোন আগ্রহ কিংবা ভীতি থাকে তবে সর্বপ্রথম আপনার নিকটবর্তী রক্তদান সংগঠন কিন্তু হাসপাতালে যোগাযোগ করুন। উপরোক্ত আলোচনার প্রেক্ষাপটে আপনার যদি কোন প্রশ্ন বা মতামত থাকে তাহলে অবশ্যই আমাদের কমেন্ট বক্সে কমেন্ট করুন এবং আমাদের পোস্টটি শেয়ার করার মাধ্যমে অন্য সবাইকেও রক্তদান সম্পর্কিত বিস্তারিত তথ্য জানার সুযোগ করে দিন।
ধন্যবাদ

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url