ওভারি সিস্ট দূর করার ঘরোয়া উপায় সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন

ওভারি সিস্ট দূর করার ঘরোয়া উপায় সম্পর্কে বিস্তারিত বিষয়বস্তু নিয়েই আমাদের আজকের মূল আলোচনা। সাথেই আপনাদের জন্য আরও থাকছে ওভারিতে সিস্ট হলে কি বাচ্চা হয় এ প্রশ্নের বিস্তারিত উত্তর বা তথ্য। তাই আজকের পোস্টটি অবশ্যই সম্পূর্ণ মনোযোগ সহকারে পড়ুন যেন এর সম্পর্কে বিশদ তথ্য পেতে পারেন।
ওভারি সিস্ট দূর করার ঘরোয়া উপায় সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন
বর্তমান সময়েও এমন অনেকেই আছেন যাদের ওভারির সিস্ট সম্পর্কে ধারণা নেই। তাই আজকের পোস্টে ওভারি সিস্ট দূর করার ঘরোয়া উপায় সম্পর্কে বিশদভাবে সকল তথ্য আপনাদেরকে জানানোর চেষ্টা করব।

ভূমিকা

সাধারণত এক ধরনের টিউমারকেই সিস্ট বলা হয়। মেয়েদের সবচেয়ে বড় শারীরিক সমস্যার মধ্যে অন্যতম একটি সমস্যা হচ্ছে ওভারি সিস্ট। আজকের পোষ্টের মাধ্যমে আমরা জানবো, ওভারির সিস্ট কি, ওভারির সিস্ট কেন হয়, ওভারিতে সিস্ট হলে কি বাচ্চা হয়, ওভারি সিস্ট দূর করার ঘরোয়া উপায়, ওভারিয়ান সিস্ট ভালো করার ব্যায়াম, ওভারিতে সিস্ট হলে করণীয় কি তা সম্পর্কে বিস্তারিত সব তথ্য।

ওভারি সিস্ট কি

সাধারণ এক ধরনের টিউমারকেই সিস্ট বলা হয়।মেয়েদের শারীরিক সমস্যার মধ্যে সবচেয়ে বড় এবং অন্যতম একটি সমস্যা হচ্ছে ওভারি সিস্ট। জরায়ুর দুই পাশে অবস্থিত দুটি ছোট গ্রন্থিকেই ওভারি বা ডিম্বাশয় বলা হয়। এবং সিস্ট হচ্ছে একটি জলভরা থলি।
এবং এই থলিতে থাকতে পারে যেকোনো ধরনের জল অর্থাৎ ঘোলা জল, নোংরা জল, সংক্রমিত জল, পরিষ্কার জল, রক্ত জল অথবা হলদে জল। এতে যদি সাধারন জল থাকে সেক্ষেত্রে এটিকে সিম্পল সিস্ট বলা হয়ে থাকে। আবার যদি পুরনো রক্ত অথবা খয়রি রঙের পদার্থ থাকলে যে সিস্ট হয় তাকে চকলেট সিস্ট বলে। সাধারণত সিস্ট দুই প্রকার হয়ে থাকে।

১. ফিজিওলজিক্যাল বা ফাঙ্কশনাল বা শরীরবৃত্তিও সিস্ট।
২. প্যাথলজিক্যাল বা রোগের কারণে তৈরি হওয়া সিস্ট।

ওভারি সিস্ট কেন হয়

চিকিৎসকদের মতে, শরীরে যখন ইস্ট্রোজেন হরমোনের ভারসাম্য নষ্ট হয়ে যাওয়ার কারনে ওভারিতে সিস্ট তৈরি হয়।ওভারিতে সিস্ট হওয়ার এটি অন্যতম একটি কারণ বলে গণ্য করা হয়। যখন ইস্ট্রোজেন হরমোনের পরিমাণ বেড়ে যায় তখন ও ভিউ লেসন অনিয়মিত হতে শুরু করে। আর এখান থেকেই শুরু হয় ওভারিতে সিস্ট তৈরি হওয়া। তাছাড়াও নিম্নে ওভারি সিস্ট এর আরো কয়েকটি কারণ বর্ণনা করা হলো।

  • অল্প বয়সে ঋতুস্রাব শুরু হয়ে গেলেও সিস্টের সমস্যা দেখা দিতে পারে।
  • কৈশোর কালে অর্থাৎ কিশোরীদের বয়সন্ধিকালের সময়েও এ ধরনের সমস্যা দেখা দিতে পারে।
  • অনেক সময় অনিয়মিত সেক্স লাইফের জন্যেও ওভারি সিস্ট হয়ে থাকে।
  • দেরিতে সন্তান নেওয়ার কারণেও অনেক সময় এ রোগের সম্মুখীন হওয়ার সম্ভাবনা থাকতে পারে।
  • হরমোন জনিত সমস্যার কারণেও সিস্ট হয়ে থাকে।
  • কিছু কিছু ক্ষেত্রে অনেক দেরিতে বিয়ে হওয়ার কারণেও এ রোগ হয়ে থাকে।

উপরোক্ত কারণ সমূহ একজন ব্যক্তির জানা থাকলে এ সকল কর্মকাণ্ড থেকে নিজেকে বিরত রেখে এ সকল রোগ থেকে বেঁচে থাকা কিছুটা হলেও সম্ভব হয়ে উঠবে। তাছাড়া যদি কোনো কারণবশত আপনিও ওভারি সিস্টারের একজন রোগী হয়ে থাকেন তাহলে প্রথমে একজন অভিজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। তারপর ওভারি সিস্ট দূর করার ঘরোয়া উপায় সমূহ জেনে তা নিজের জন্য প্রয়োগ করতে পারবেন।

ওভারি সিস্টের লক্ষণ

প্রতিটি রোগের মতো এই রোগেরও কিছু লক্ষণ রয়েছে। যা প্রতিটি মানুষের জেনে রাখা মঙ্গলময়। তাই নিম্নে ওভারি সিস্টার লক্ষণ সম্পর্কে কিছু তথ্য উল্লেখ করা হলো।

  • সর্বপ্রথম লক্ষণ হিসেবে দেখা যায় অনিয়মিত মাসিক হওয়া অর্থাৎ ঠিকমতো মাসিক না হওয়া। অনেক সময় অনেক দেরিতে মাসিক হয় এটা থেকেও সিস্টের লক্ষণ প্রকাশ পায়।
  • তলপেট ফুলে যায় এবং তলপেটে তীব্র ব্যথা হয়। যদিও বা কিছু কিছু ক্ষেত্রে এই তলপেটের ব্যথা তীব্র না হয়ে হালকাও হতে পারে।
  • অন্যতম আরো একটি লক্ষণ হচ্ছে যৌন মিলনের সময় অনেক বেশি ব্যথা হওয়া।
  • সাথে প্রস্রাবের ক্ষেত্রেও ভিন্ন ভিন্ন সমস্যা দেখা দেয় সাথে বমি বমি ভাবো হয়।
  • যদি কোন কারণবশত সিস্ট ফেটে যায় সে ক্ষেত্রেও তীব্র ব্যথা অনুভূত হতে পারে।
  • পেট ফেপে ওঠা এবং বুকে জ্বালাপোড়া হওয়াও ওভারিয়ান সিস্টের অন্যতম একটি লক্ষণ।
  • অনেক ক্ষেত্রে সিস্ট ফেটে গিয়ে রক্ত বের না হওয়ার কারণেও ব্যথা হয়ে থাকে।

ওভারিতে সিস্ট হলে কি বাচ্চা হয়

সাধারণত বয়সন্ধিকাল থেকে শুরু করে ৫০ বছর বয়সের মধ্যেই হয়ে থাকে ওভারি সিস্ট এর সমস্যা। যদিও বা বর্তমানে প্রায়শই নারীদের এই রোগ হতে দেখা যাচ্ছে। এর কারণ মূলত বর্তমান সময়ে নারীদের লাইফ স্টাইল এর পরিবর্তন। তবে ওভারি সিস্ট নিয়ে অনেকের মনে অনেক ধরনের ধারণা রয়েছে। তাহলে চলুন আজকে জেনে নেই ওভারিতে সিস্ট হলে বাচ্চা হওয়ার সম্ভাবনা থাকে কি না। নিম্নে এ বিষয়ে সংক্ষিপ্ত আকারে কিছু তথ্য উল্লেখ  করা হলো।
  • ওভারি সিস্ট থাকলেও গর্ভবতী হওয়া সম্ভব। ডিম্বাশ ফুটনের সময় এই ওভারি সিস্ট সমস্যার সৃষ্টি করে থাকে। যার কারনে গর্ভধারণ করা কঠিন হয়ে পড়ে। তবে অসম্ভব নয় কারণ এরও চিকিৎসা রয়েছে। এবং এর চিকিৎসা পেতে অবশ্যই একজন অভিজ্ঞ ডাক্তারের সঙ্গে যোগাযোগ করতে হবে।
  • গর্ভাবস্থায় যদি সিস্ট ধরা পড়ে এবং সেটি যদি বাচ্চার সাথে সাথে বড় হতে থাকে, সেক্ষেত্রে গর্ভবতী নারীকে অনেক সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। যেমন- প্রসবের সময় সিস্ট ফেটে যাওয়া।
  • ওভারিতে সিস্ট থাকলে একজন নারীর ফার্টিলিটিতে সমস্যা দেখা দিতে পারে।
  • গর্ভাবস্থায় যদি সিস্ট হয় এবং সেটি যদি কোনভাবে ঘুরে না যায়, তাহলে এটিকে কোন কিছুই করা হয় না। তবে গর্ভাবস্থায় থাকার ১৪ থেকে ২০ সপ্তাহের মধ্যে এই সিস্টটিকে অপারেশন করে নেয়া যেতে পারে। তবে এক্ষেত্রে অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে যে, ১৪ সপ্তাহের আগে অথবা ২০ সপ্তাহের পরে  কোনভাবেই অপারেশন করা যাবে না।
  • গর্ভাবস্থায় সিস্ট ধরা পড়লে সুস্থ থাকার জন্য অবশ্যই একজন স্ত্রী রোগ বিশেষজ্ঞের সান্নিধ্যে থাকা খুব বেশি জরুরি।

ওভারি সিস্ট দূর করার ঘরোয়া উপায়

ওভারিয়ান সিস্টার লক্ষণ এর সাথে যদি আপনার কোন লক্ষণ মিলে যায় সেক্ষেত্রে ঘরোয়া চিকিৎসা অবলম্বনের পূর্বে অবশ্যই পরীক্ষা-নিরীক্ষা করিয়ে একজন ভালো অভিজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত। সাথে অবলম্বন করতে পারেন ওভারি সিস্ট দূর করার ঘরোয়া উপায় সমূহ। নিম্নে ঘরোয়া কিছু উপায় এর কথা উল্লেখ করা হলো।

  • ডিম্বাশয়ের আশেপাশের পেশিগুলোতে অনেক সময় ব্যথার কারণে টানটান হয়ে যায়। সে ক্ষেত্রে পিঠের নিচের অংশে, উরুতে, পেটে এবং নিতাম্বে হালকা করে মালিশ করা যেতে পারে। এতে করে টান ধরে থাকা পেশী গুলো আলাদা হতে এবং ব্যথা কমাতে সাহায্য হতে পারে।
  • খাদ্যের অভ্যাসগুলোর পরিবর্তন করতে হতে পারে। কেননা খাদ্যের মাধ্যমে আমাদের দেহ রোগ ব্যাধি কমাতে সাহায্য করে। খেয়াল রাখতে হবে যে, ওজন বাড়ে এমন কোন খাদ্য গ্রহণ করা যাবে না।
  • ওভারিয়ান সিস্টার রোগীদের অবশ্যই প্রচুর পরিমাণে পানি পান করতে হবে।
  • যেহেতু আমরা জানি, তাপ রক্ত প্রবাহ বাড়াতে সাহায্য করে এবং ব্যথা কমাতেও অনেকটাই সাহায্য করে। সেহেতু একটি হিটিং ব্যাগ অথবা গরম পানির বোতল দিয়ে গরম সেক দেয়া যেতে পারে।
  • আক্রান্ত ব্যক্তির যদি ওজন বেশি হয় সেক্ষেত্রে তার ওজন কমানোর মাধ্যমেও এ রোগ থেকে মুক্তি পাওয়ার বা কিছুটা হলেও নিয়ন্ত্রণে আসার সম্ভাবনা বেড়ে যায়।
  • প্রতিদিন নিয়ম করে প্রয়োজনীয় ব্যায়াম গুলো করতে হবে।
  • সব সময় নিজেকে শান্ত প্রিয় অর্থাৎ রিলাক্স রাখতে হবে। কোন ধরনের অতিরিক্ত চিন্তা, বাজে চিন্তা করা থেকে নিজেকে বিরত রাখতে হবে। সম্ভব হলে অবশ্যই মেডিটেশন করা উচিত এতে আপনার ব্রেন সতেজ থাকবে সাথে শরীরও থাকবে যা আপনার রোগ নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে অনেক বেশি কার্যকরী ভূমিকা পালন করবে।

ওভারিয়ান সিস্ট ভালো করার ব্যায়াম

প্রত্যেকটা রোগের জন্য ব্যায়াম অথবা যোগাসন আমাদেরকে অনেক বেশি উপকারিতা দিয়ে থাকে। তবে এ সকল ব্যায়াম অবশ্যই কোন বিশেষজ্ঞের পরামর্শ অনুযায়ী করতে হবে। কারণ কোন রোগে জন্য কোন ব্যায়াম করতে হবে সেটা আমাদের অনেকেরই অজানা। তবে ওভারিয়ান সিস্ট ভালো করার জন্য নিম্নে কিছু ব্যায়ামের উল্লেখ করা হলো যা অবশ্যই আপনার সিট ভালো করতে কিছুটা হলেও সহায়তা করবে।

নৌকাসনঃ সমান্তরাল মেঝেতে মাদুর পেতে শবাসন এ শুয়ে দুই পা একসাথে একটু একটু করে তুলতে হবে এবং দুই হাত মেরুদণ্ড সোজা রেখে যতটা সম্ভব নিতম্ভে ভারসাম্য রেখে শরীরকে বাঁকাতে হবে । দুই হাত বাহু বরাবর দুই পায়ের পাশে ভুমির সমান্তরালে রাখতে হবে। শ্বাসপ্রশ্বাস স্বাভাবিক রেখে ৩০ সেকেন্ড করে তিন বার আসন টি করবেন। এবং ৩০ সেকেন্ড আসন করে ১০ সেকেন্ড বিশ্রাম এভাবে ৩ বার করতে হবে।

পর্বতাসনঃ ভুমিতে দাড়িয়ে পা ও মেরুদন্ড সোজা রেখে দুই হাত উপরে তুলে আস্তে আস্তে সামনের দিকে ঝুকতে হবে হাত যেন ভুমি স্পর্শ করে। কোমর যতসম্বব বাকাতে হবে।এভাবে শ্বাস প্রশ্বাস এর গতি ঠিক রেখে ৩০ সেকেন্ড থাকতে হবে ও শবাসন এ ১০ সেকেন্ড বিশ্রাম নিতে হবে।৩ বার করবেন একই ভাবে।
ভুজঙ্গাসনঃ বুকের উপর ভর দিয়ে মাটিতে শুয়ে দুই হাত এ ভর দিয়ে পা কোমর পর্যন্ত স্থির রেখে সামনের দিকে হাত সোজা করে শরীর তুলে ধরতে হবে নিশ্বাস নিতে হবে। মাথা মুখ চিবুক টানটান রাখতে হবে।৩০ সেকেন্ড আসন করে ১০ সেকেন্ড বিশ্রাম নিতে হবে এভাবে ৩ বার করবেন।

হলাসনঃ চিত হয়ে শুয়ে দুটো পা একত্রে করে তুলে মাথার উপর দিয়ে ভুমি স্পর্শ করাতে হবে হাত দুইপাশে স্বাভাবিক তেখে শ্বাস স্বাভাকিক রাখতে হবে ৩০ সেকেন্ড আসন করে ১০ সেকেন্ড বিশ্রাম করতে হবে। ৩ বার করতে হবে।

ওভারিতে সিস্ট হলে কি করনীয়

যদি ওভারিয়ান সিস্টের লক্ষণ এর সাথে আপনার নিজের সমস্যার লক্ষণগুলি মিলে যায় সেক্ষেত্রে অবশ্যই পরীক্ষা-নিরীক্ষা করিয়ে একজন ভালো অভিজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত। এবং চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী নিয়মিত প্রয়োজনীয় ওষুধগুলো সঠিক সময়ে সঠিকভাবে গ্রহণ করতে হবে। সাথেই খাদ্যাভ্যাস এর নিয়ম গুলোও অবশ্যই মেনে চলতে হবে।

লেখকের মন্তব্য

আশা করি আজকের পোষ্টের মাধ্যমে আপনারা ওভারি সিস্ট দূর করার ঘরোয়া উপায় সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য জানতে পেরেছেন। তবে আপনার অথবা আপনার পরিবারের বা পরিচিত কারো যদি ওভারি সিস্ট হয়ে থাকে তবে সর্বপ্রথম অভিজ্ঞ চিকিৎসকের কাছে গিয়ে পরামর্শ নিতে হবে। উপরোক্ত আলোচনার প্রেক্ষাপটে আপনাদের যদি কোন প্রশ্ন বা মতামত থাকে তাহলে অবশ্যই আমাদের কমেন্ট বক্সে কমেন্ট করুন। এবং আমাদের পোস্টটি শেয়ারের মাধ্যমে অন্য সবাইকেও ওভারির সিস্ট সম্পর্কে বিস্তারিত জানার সুযোগ করে দিন।
ধন্যবাদ

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url