কিডনিতে পাথর হলে করণীয় কি তার বিস্তারিত তথ্য জানুন

কিডনিতে পাথর হলে করণীয় কি তার বিস্তারিত তথ্য বা বিষয়বস্তু নিয়েই আমাদের আজকের মূল আলোচনা। সাথেই আপনাদের জন্য আরো থাকছে, কিডনিতে পাথর হলে বোঝার উপায় সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য। তাই আজকের পোস্টটি আপনি সম্পূর্ণ মনোযোগ সহকারে পড়ুন যেন এর সম্পর্কে বিশদ তথ্য পেতে পারেন।
কিডনিতে পাথর হলে করণীয় কি তার বিস্তারিত তথ্য জানুন
এমন অনেকেই আছেন যারা কিডনিতে পাথরের বিষয়ে তেমন কিছুই জানেন না। তাই আমাদের আজকের পোষ্টের মাধ্যমে কিডনিতে পাথর হলে করণীয় কি তার সম্পর্কে সবকিছুর বিস্তারিত তথ্য আপনাদেরকে জানানোর চেষ্টা করব।

ভূমিকা

কিডনি হচ্ছে দেহের রক্তকে পরিশোধন করার একটি অঙ্গ। অর্থাৎ আমাদের দেহে যত রকম বর্জ্য উৎপন্ন হয় তা পরিষ্কার করার গুরু দায়িত্ব হচ্ছে কিডনির। আর যদি এই কিডনিতেই সংক্রমণ হয় তাহলে বলা চলে যে, আমাদের সম্পূর্ণ শরীর প্রায় অকেজো হয়ে যাবে। মূলত কিডনির সমস্যা মানেই হচ্ছে পাথর হওয়ার সমস্যা। এইজন্য আমাদেরকে নিজেদের শরীর সম্পর্কে সচেতন হতে হবে আর জানতে হবে প্রতিটি অঙ্গের বিস্তারিত সবকিছু সম্পর্কে। তাই আজ আমরা এই পোস্টের মাধ্যমে জানবো কিডনিতে পাথর কি, কিডনিতে পাথর কেন হয়, কিডনিতে পাথর হলে বোঝার উপায়, কিডনিতে পাথর হলে কি খাওয়া যাবেনা, কিডনির পাথর গলায় কোন খাবার, কিডনিতে পাথর হলে করণীয় কি, কিডনিতে পাথর হলে কি ব্যায়াম করতে হয়, কিডনিতে পাথর হলে কি কি সমস্যা হয় এর বিস্তারিত সকল তথ্য।

কিডনিতে পাথর কি

আমাদের দেহ ৭০ ভাগ পানি দিয়ে গঠিত এবং এই ৭০ ভাগ পানিকে বিশুদ্ধ করে রক্তের প্রবাহে যে অক্সিজেনের মাত্রা থাকে তাকে ঠিক রাখতে কাজ করে কিডনি। ভিন্ন ভাবে বলতে গেলে কিডনিতে পাথর বলতে মূত্রনালীর বা রেনাল ক্যালকুলি কিডনির মধ্যে একটি শক্ত, স্ফটিক খনিজ পদার্থের গঠনকে বোঝানো হয়। পৃথিবীতে প্রকৃতি যেমনটা নিজের খনিজ উপাদান দিয়ে পাথর তৈরি করে ঠিক তেমনি ভাবে আমাদের মানবদেহের কিছু উপাদান ও খনিজ রয়েছে যা দিয়ে আমাদের শরীরের বিভিন্ন অঙ্গে পাথরের সৃষ্টি হতে পারে। যেমন- কিডনি, অগ্নাশয়, পিত্তথলি, মূত্রথলি। আর এই পাথর কিডনিতে হলে কিডনি নিজের কাজে অনেক বাধাগ্রস্ত হয়ে পড়ে।

কিডনিতে পাথর কেন হয়

কিডনিতে পাথর কেন হয় তা জানার জন্য একদল গবেষক বহুদিন থেকে এখন পর্যন্ত গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছেন। তবে কিছু গবেষকদের মতে, পাথর হওয়ার প্রধান কারণ হিসেবে ডিহাইড্রেশন কেই দায়ী করা হয়েছে। আমাদের শরীর সত্তর ভাগ পানি দ্বারা গঠিত কিন্তু যখন এই পানি শরীর থেকে কমতে শুরু করে তখন শুরু হয় ডিহাইড্রেশন। তাই বলা যায় যারা অত্যাধিক গরম আবহাওয়ায় বসবাস করেন বা কাজ করেন এবং পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করেন না বা করতে পারেন না তাদের শরীর থেকে পানির পরিমাণটি কমতে থাকে এবং একসময় পাথর তৈরির আশঙ্কা বেড়ে যায়। এছাড়াও বারবার প্রসাবে সংক্রমণ হতে থাকলেও পাথর হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়। আবার শরীরের কিছু খনিজ উপাদান আছে যা পাথর তৈরিতে বাধা দিয়ে কিডনিকে রোগ মুক্ত রাখে। আর এই খনিজ উপাদান যদি প্রস্রাবে কমে যায় সে ক্ষেত্রেও কিডনিতে পাথর হওয়ার আশঙ্কা থাকে। যেমন একজন ব্যক্তির প্রস্রাবে সাইট্রাস এর পরিমাণ কমে গেলে, ম্যাগনেসিয়ামের পরিমাণ কমে গেলে অথবা জিংক এর পরিমাণ কমে গেলেও এই সমস্যার সম্মুখীন হতে। কিডনির এই পাথরগুলো ছোট এবং বড় দুই রকমেরই হয়ে থাকে।

কিডনিতে পাথর হলে বোঝার উপায়

সর্বপ্রথম নিজেকে এবং নিজের কিডনিকে সুস্থ রাখার জন্য সঠিক খাদ্য অভ্যাস তৈরি করতে হবে এবং সঠিক নিয়মে জীবনকে পরিচালনা করতে হবে। তাছাড়াও কিডনির পাথর সম্পর্কে এবং কিডনিতে পাথর হলে করণীয় কি তা সম্পর্কে জেনে রাখা উত্তম যেন নিজের অথবা নিজের পরিজনদের ক্ষেত্রে এ সকল পদক্ষেপ গুলো বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয়। কিডনিতে পাথর হলে কিভাবে বোঝা যাবে তার সম্পর্কে কিছু তথ্য নিম্নে উল্লেখ করা হলো।

বমিঃ কিডনিতে পাথর হলে কোমর বা পেটের ব্যথার তীব্রতার কারণে অনেক ক্ষেত্রে ব্যক্তি বমি বমি অনুভব করে থাকে আবার অনেক সময় বমিও হয়ে যায়।

প্রস্রাবে রক্তঃ কিডনিতে পাথর হওয়ার আরো একটি লক্ষণ হচ্ছে প্রস্তাবের সাথে রক্ত নির্গত হওয়া।

শরীর ফুলে যাওয়াঃ কিডনিতে পাথরের আরো একটি লক্ষণ হচ্ছে রোগীর শরীর ফুলতে শুরু করবে।

অতিরিক্ত ঘুমঃ আপনার কিডনি ক্ষতিগ্রস্ত অথবা কিডনিতে পাথর হয়েছে তা বোঝার অন্যতম আরও একটি লক্ষণ হচ্ছে মাত্রাতিরিক্ত ঘুম।

তীব্র ব্যথাঃ পিঠে এবং কোমরে তীব্র ব্যথা অনুভব হতে পারে। ব্যথাটি এতটাই তীব্র হবে যে নিত্যদিনের কাজকর্মে বাধা গ্রস্ত হতে পারেন। এই ব্যথাটি পিঠের নিচে অর্থাৎ কোমরে, পেটে বা কুঁচকিতেও হতে পারে। ব্যথার যন্ত্রণায় অনেক ক্ষেত্রে বসে থাকা এবং শুয়ে থাকা দুটোতেই আরাম পাওয়া যায় না। এই ব্যথা অনেক সময় এক ঘন্টা পর্যন্তও স্থায়ী হতে পারে।

কিডনিতে পাথর হলে কি খাওয়া যাবে না

কিডনিতে পাথরের সৃষ্টি এড়িয়ে চলতে যেভাবে খাদ্যাভ্যাস ও স্বাস্থ্যসম্মত জীবনযাত্রার মান অনুসরণ করতে হয় ঠিক সেভাবেই কিডনিতে পাথর হলে আমাদের খাদ্যাভ্যাসে কিছু পরিবর্তন ও নিয়ন্ত্রণ আনতে হয়। সাধারণত পর্যাপ্ত পানির অভাবে কিডনিতে পাথর জাতীয় সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। এজন্য কিডনিতে পাথর হলে নিষিদ্ধ কিছু খাবারের তালিকা নিচে উল্লেখ করা হলো।

  • প্রক্রিয়াজাত করা বহিরাগত খাদ্য। যেমনঃ ফাস্টফুড আইটেম, ভাজাপোড়া ইত্যাদি।
  • যথাসম্ভব লবণ এড়িয়ে চলা। অর্থাৎ অতিরিক্ত লবণ যুক্ত খাবার উপেক্ষা করে স্বাভাবিক খাবারে মনোযোগী হওয়া। কিডনিতে পাথর হলে সোডিয়ামকে না বলাই শ্রেয়।
  • প্রাণিজ উৎস থেকে আসা খাদ্য কমিয়ে ফেলতে হবে।
  • অক্সালেট সমৃদ্ধ খাদ্যের পরিমাণ সীমিত করে নেয়া উচিত। উদাহরণস্বরূপঃ পালং শাক, গম ইত্যাদি।

তবে যদি কারো কিডনিতে পাথর ধরা পরে তাহলে সর্বপ্রথম একজন কিডনি বিষেশজ্ঞের কাছে চিকিৎসাধীন হতে হবে। সাথেই জেনে নিতে হবে কিডনিতে পাথর হলে করণীয় কি কি।

কিডনির পাথর গলায় কোন খাবার

পূর্বে বর্ণিত অনুচ্ছেদে এ কথা তুলে ধরা হয়েছে যে কিডনির পাথর অপসারণে খাদ্যাভ্যাসের পরিবর্তন আনা কতটা জরুরী। যেভাবে কিডনির পাথর সারিয়ে তুলতে কিছু খাবার অপেক্ষা করে চলতে হয় সেভাবেই খাদ্যাভাসে কিছু পরিবর্তন আনার মাধ্যমে কিডনি পাথর গলানো সম্ভব।

পানিঃ শরীরকে সুস্থ রাখার জন্য প্রধান উপাদান হলো পানি। পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি গ্রহণের ফলে কিডনি দ্রুত পরিষ্কার প্রক্রিয়া কার্যকর করে।

ক্যালসিয়ামঃ ক্যালসিয়াম পর্যাপ্ত পরিমাণে গ্রহণের ফলে এটি অক্সালেট এর সাথে বিক্রিয়া করে। যেহেতু অক্সয়লেট কিডনিতে পাথর হওয়ার অন্যতম কারণ তাই সরাসরি ক্যালশিয়াম জাতীয় খাদ্য গ্রহণের ফলে ক্যালসিয়াম অক্সাইলেট এবং ক্যালসিয়াম ফসফেট উভয় অপসারিত হয়ে যায়। এর জন্য কোন পরিপূরক ব্যবহার না করে সরাসরি দুধ, দুই, সবুজ শাক এবং ডাল জাতীয় খাদ্য থেকে ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন-ডি গ্রহণ করা উত্তম।

সাইট্রিক এসিড বা সাইট্রাসঃ সাইট্রাস সমৃদ্ধ খাবার কিডনিতে পাথর গলিয়ে তুলতে অনেক উপকারী। এর জন্য লেবু বা অন্য সাইপট্রাস ফল খাওয়া যেতে পারে।

উদ্ভিজ প্রোটিনঃ উদ্ভিদ প্রোটিন, যেমন- সয়া, বাদাম, লেগুম, মটর ইত্যাদি গ্রহনের ফলে কিডনির পাথর সারিয়ে তোলা অনেক সহজ হয়ে ওঠে। এছাড়াও আস্ত শস্য যেমন- ওট্স, বাদামী চাল, গমের রুটি ইত্যাদি শরীরের পুষ্টি বাড়িয়ে তোলে ফলে কিডনি রোগ প্রতিরোধ করা সহজ হয়।

কিডনিতে পাথর হলে করণীয় কি

কিডনিতে পাথর হওয়ার সমস্যা আমাদের বেশ পরিচিত। কিডনিতে পাথর হলে বিচলিত না হয়ে বরং কিছু নিয়ম মেনে চললে দ্রুত সেরে ওঠা সম্ভব। যেকোনো সমস্যার সমাধানে পৌঁছানোর পূর্বে প্রথমে সমস্যাটি ভালোভাবে শনাক্ত ও পর্যবেক্ষণ করা প্রয়োজন। তাই প্রথমেই রোগ নির্ণয় করে রোগের অবস্থা সনাক্ত করতে হবে। এবারে আসা যাক কিডনিতে পাথর হলে করনীয় কি কি রয়েছে।

যেহেতু কিডনি আমাদের একটি পরিপাকতন্ত্র তাই করণীয় কাজগুলোর মধ্যে স্বাস্থকর খাদ্যাভ্যাসের দিকে নজর দেয়া প্রধান একটি কাজ। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে কিডনিতে পাথর হওয়ার অন্যতম কারণ হিসেবে আমাদের খাদ্যাভাসই অন্তর্ভুক্ত। তাই পরিমিত পরিমাণে পানি পান করতে হবে, প্রাণিজ আহার পরিহার করে উদ্ভিদ মাধ্যমে পাওয়া প্রোটিন গ্রহণ করতে হবে এবং কিডনিতে পাথর সৃষ্টিতে উৎসাহ দেয় এমন সকল খাদ্য নিয়মিত খাদ্য তালিকা থেকে বর্জন করতে হবে।

তা সম্ভব না হলেও কতিপয় পরিমাণ কমিয়ে আনতে হবে। অভিজ্ঞ চিকিৎসকের দেয়া পরামর্শ অনুযায়ী চলতে হবে এবং নিয়মিত ওষুধ সেবন করতে হবে সাথেই নিয়মিত শরীর চর্চা করতে হবে। পাথর থেকে মুক্তি পেতে কিছু ক্ষেত্রে আধুনিক চিকিৎসা পদ্ধতি অবলম্বন করা যেতে পারে তবে তা অবশ্যই বিশেষজ্ঞের পরামর্শ অনুযায়ী হতে হবে।

একেক জন রোগীর ধরন একেক রকম হয়। একইভাবে কিডনিতে পাথর ভিন্ন ভিন্ন মানুষের ক্ষেত্রে ভিন্ন রকম হতে পারে। কিডনির পাথরের আকার ছোট হলে তা আলফা ব্লকার এর সাহায্যেই পরিষ্কার করা সম্ভব। তবে কিডনির পাথরের এই পরিমাণ বেড়ে গেলে এর চিকিৎসা পদ্ধতিও ভিন্ন রকম হয়ে যায়।

কিডনিতে পাথর হলে কি কি সমস্যা হয়

সাধারণত কিডনিতে পাথর হওয়ার পেছনে মুখ্য কারণ গুলো হল স্থূলতা, দেহে পরিমিত জলের ঘাটতি, অতিরিক্ত রক্তচাপ, অতিরিক্ত প্রাণিজ প্রোটিন সরবরাহ অথবা পারিবারিক ইতিহাস থেকে কিডনির সমস্যা। কিডনিতে পাথর হলে নানাবিধ সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। কিডনিতে পাথর হওয়ায় উল্লেখযোগ্য কিছু সমস্যাগুলো হলঃ অধিক হারে ব্যথা ও বমি, রক্তক্ষরণ যুক্ত প্রস্তাব, মূত্রাশয়ে ক্ষত ও জটিলতা হওয়া, সেপ্টিসেমিয়া, কিডনির ক্ষতি ও অকার্যকারিতা ইত্যাদি।

লেখকের মন্তব্য

আশা করি আজকের পোষ্টের মাধ্যমে আপনারা কিডনিতে পাথর হলে করণীয় কি? তার বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য জানতে পেরেছেন। উপরোক্ত আলোচনার প্রেক্ষাপটে আপনাদের যদি কোন প্রশ্ন বা মতামত থাকে তাহলে অবশ্যই আমাদের কমেন্ট বক্সে কমেন্ট করুন। এবং আমাদের পোস্টটি শেয়ারের মাধ্যমে অন্য সবাইকে কিডনির রোগ সম্পর্কে বিস্তারিত জানার সুযোগ করে দিন।
ধন্যবাদ

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url