হাঁসের ডিম খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে জানুন

হাঁসের ডিম খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা নিয়েই আমাদের আজকের আলোচনা। সাথেই থাকছে হাঁসের ডিম খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কেও কিছু তথ্য যা হয়তো আমরা অনেকেই জানিনা। তাই আমাদের পোষ্টের সঙ্গেই থাকুন এবং সম্পূর্ণ পোস্টটি মনোযোগ সহকারে পড়ুন যাতে করে আপনি এর সম্পর্কে বিস্তারিত সবকিছু জানতে পারবেন।
আপনি যদি হাঁসের ডিম খাওয়ার বিষয় বস্তু সম্পর্কে জানতে আগ্রহী হয়ে থাকেন তাহলে আজকের আমাদের এই পোস্টটি আপনার জন্যই। আমরা অনেকেই হয়তো এটির কিছু উপকারিতা সম্পর্কে জানি তবে হাঁসের ডিম খাওয়ার নিয়ম রয়েছে যা আমাদের অনেকেরই অজানা। তাহলে চলুন আজকের পোস্টে আমরা হাঁসের ডিম সম্পর্কে জানা অজানা সব তথ্য জেনে নেই।

ভূমিকা

হাঁসের ডিম আমাদের অনেকেরই খুব প্রিয় একটি খাদ্য। তবে খাবার কি শুধু খাওয়ার জন্য খেলেই চলবে না। এতে থাকতে হবে যথেষ্ট পুষ্টিগুণ যা দেহের জন্য হয়ে উঠবে অমৃত সমতুল্য বা অনেক বেশি উপকারি। আজকের পোষ্টের বিস্তারিত আলোচনায় আমরা হাঁসের ডিম খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতার সাথে আরো জানবো হাঁসের ডিমের পুষ্টিগুণ, হাঁসের ডিম অর্ধ সিদ্ধ খেলে কি হয়, হাঁসের ডিমে কি এলার্জি আছে এবং হাঁসের ডিম খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে।

হাঁসের ডিমের পুষ্টিগুণ

হাঁসের ডিমে রয়েছে নানা পুষ্টিগুণ যা মানব দেহের জন্য অতি প্রয়োজনীয়। হাঁসের ডিম খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতার পাশাপাশি এই পুষ্টিগুণ সম্পর্কেও আমাদের জানা উচিত। তুলনামূলক ভাবে মুরগির ডিমের চেয়ে হাঁসের ডিমের পুষ্টিগুণ অনেক বেশি। মুরগির ডিমের তুলনাতে হাঁসের ডিম আকারেও অনেক বড় হয়ে থাকে। এর খোসা মুরগির ডিমের তুলনায় অনেকাংশে মোটা হয়ে থাকে এবং এর কুসুমও অনেকটা বড় হয়ে থাকে। নিচে প্রতি ১০০ গ্রাম ডিমের পুষ্টিগুণ সম্পর্কে আলোচনা করা হল।

  • প্রোটিন ১৩.৫ গ্রাম
  • কলেস্টরেল ৮৮৪ মিলিগ্রাম
  • ফ্যাট বা চর্বি ১৩.৭ গ্রাম
  • খাদ্য শক্তি ১৮১ কিলো ক্যালোরি
  • ভিটামিন এ ২৬৯ মাইক্রগ্রাম
  • এনার্জি ১৮৫ কিলো ক্যালরি
  • ক্যালসিয়াম ৭০ মিলিগ্রাম
  • লোহা ৩ মিলিগ্রাম
  • ভিটামিন ডি, ভিটামিন বি ৬, ভিটামিন বি১২,ভিটামিন ই, খনিজ, ফসফরাস, ফোলেট, দস্তা, সেলেনিয়াম, ম্যাঙ্গানিজ, আইরন, পটাশিয়াম, থিয়ামিন, সোডিয়াম, নিয়ামিন এই সবকিছুই ১০০ গ্রাম হাঁসের ডিমে বিদ্যমান রয়েছে। তবে মুরগির ডিমের তুলনায় সব কিছুরই পরিমাণ একটু বেশিই পাওয়া যায় হাঁসের ডিমে।

হাঁসের ডিম অর্ধ সিদ্ধ খেলে কি হয়

হিন্দিতে একটা কথা আছে, 'সান্ডে হো ইয়া মান্ডে রোজ খাও আন্ডে '। ডিমের পুষ্টিগুণের কারণেই এমন প্রবাদ তৈরি করা হয়েছে সে হোক হাঁসের ডিম অথবা মুরগির ডিম। তবে মুরগির ডিমের তুলনায় হাঁসের ডিমের পুষ্টিগুণ অনেক গুনে বেশি। পুষ্টিগুণে ভরপুর এই ডিম প্রায় অনেকেরই খুব পছন্দের একটি খাবার। লক্ষ্য করলে দেখা যায় প্রায় কম বেশি সব খাবারের সাথেই ডিম থাকে।
কখনো নাস্তার টেবিলে কখনো বা বাচ্চাদের টিফিনে কখনো বা বিভিন্ন রকম খাবারের রেসিপিতে। ডিম বিভিন্নভাবে খাওয়া হয়ে থাকে, কেউ অমলেট কেউ পোচ কেউবা সিদ্ধ ডিম খেতে পছন্দ করেন। সিদ্ধ ডিমেও আবার তফাৎ আছে, অর্থাৎ অনেকেই অর্ধ সিদ্ধ ডিমও খেয়ে থাকেন। আজ আমরা হাঁসের ডিম খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতার পাশাপাশি জানার চেষ্টা করব হাঁসের ডিম অর্ধ সিদ্ধ খেলে কি হয়। 

চিকিৎসকদের পরামর্শ অনুযায়ী প্রতিদিনের সকালের নাস্তায় ডিম পোচ বা অমলেট এর তুলনায় অন্ততপক্ষে একটি ডিম সিদ্ধ করে খাওয়া শরীরের জন্য খুবই উপকারী। ছোট, বড়, বৃদ্ধ প্রায় সব বয়সের মানুষের জন্যই ডিম খুবই পুষ্টিকর একটি খাবার আর তা যদি হয় হাঁসের ডিম তাহলে তো কোন কথাই নেই। কারণ, এর পুষ্টিগুণ অন্যান্য ডিমের তুলনায় অনেক বেশি।

পুষ্টিবিদরাও বলেছেন প্রতিটি বয়সের মানুষ সকালের নাস্তায় অন্ততপক্ষে একটি ডিম সিদ্ধ যেন অবশ্যই খায়। অনেকেই ডিমের পোচ, ওমলেট, অর্ধ সিদ্ধ ডিম, কাঁচা ডিম আবার অনেকেই ডিমকে নামে মাত্র ভেজে কাঁচা অবস্থাতেই খেতে পছন্দ করেন। আসলে তারা জানেন না অথবা জানতে চান না যে কাজটা তারা করছে সেটা আদৌ তার জন্য বা তার দেহের জন্য উচিত কিনা।

গবেষণায় একটি ডিমের খোসাতে ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র ছিদ্র পাওয়া গেছে। যা থেকে ডিমের ভেতরে নানা রকম ব্যাকটেরিয়া প্রবেশ করে। আর যেহেতু একটি মুরগি মলদ্বার থেকে ডিম পারে সেহেতু সর্বপ্রথম ব্যাকটেরিয়া এভাবেই ডিমের ভিতরে প্রবেশ করে। তাই আমাদের কখনোই কাঁচা ডিম, আধাকাঁচা ডিম ভাজা অথবা অর্ধ সিদ্ধ ডিম খাওয়া উচিত না।

এভাবে ডিম খেলে বিশেষ করে গরমের সময় বা বর্ষার সময়ে সালমোনেলা নামক ব্যাকটেরিয়া ইনফেকশন হয়ে পেটের অসুখ তৈরি করে বা বলা যায় পেটে গন্ডগোল সৃষ্টি করে। তাই ডিম সবসময় অন্ততপক্ষে আধা ঘন্টা সিদ্ধ করে অর্থাৎ হার্ড বয়েল করেই খাওয়ার পরামর্শ দেন পুষ্টিবিদ এবং চিকিৎসকরা।

হাঁসের ডিমে কি এলার্জি আছে

অবশ্যই হাঁসের ডিম একটি পুষ্টিকর খাদ্য তবে কিছু কিছু মানুষের জন্য অর্থাৎ যাদের এলার্জি জনিত সমস্যা রয়েছে তাদের জন্য এটি পুষ্টিকরের পাশাপাশি একটি বিরক্তিকর পরিস্থিতি সৃষ্টির কারণও। সব এলার্জিতেই হাঁসের ডিম খাওয়া যাবেনা এমনটি নয়।
তাই বলা যায় কিছু কিছু মানুষ আছে যাদের হাঁসের ডিম খেলে এলার্জির সমস্যার সমূহের সম্মুখীন হতে হয়। যেমন হাতের এবং পায়ের বিভিন্ন জায়গায় ছোট ছোট ফুসকুড়ির মতো দানা দেখা যায়। তাই আমরা বলতে পারি যে হ্যাঁ হাঁসের ডিমে এলার্জি আছে। তবে সব ধরনের এলার্জির রোগীদের জন্য নয়।

হাঁসের ডিম খাওয়ার উপকারিতা

আজকের পোষ্টের শুরুতেই আমরা জেনেছি এর পুষ্টিগুণ সম্পর্কে। এবার হাঁসের ডিম খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতার মধ্যেকার উপকারিতা সমূহ সম্পর্কে আমরা জানবো।

  • প্রতিদিন নিয়ম করে যদি একটি হাঁসের ডিম খাওয়া যায় তাহলে দৃষ্টিশক্তির উন্নতি ঘটানো সম্ভব।
  • ছোট বড় যে কোন বয়সের মানুষের মস্তিষ্কের বিকাশের জন্য হাঁসের ডিম প্রচুর সহায়তা করে।
  • নিয়ম করে একটি হাঁসের ডিম খেলে দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে।
  • হাসির ডিমে কোলেস্টরেল বেশি থাকা সত্ত্বেও, এটি রক্তের কোলেস্টেরল বৃদ্ধি করতে খুব একটা সাহায্য করতে পারে না।
  • উচ্চ প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার হওয়ার কারণে হাঁসের ডিম মানবদেহের কিছু গুরুত্বপূর্ণ হরমোন তৈরিতে অনেক সহায়তা করে থাকে।
  • হাঁসের ডিম দেহের ট্রাইগ্লিসারাইডের মাত্রা কমাতে সাহায্য করে।
  • ক্যান্সার রোগের ঝুঁকি কমানোর ক্ষেত্রেও অনেক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে এই হাঁসের ডিম। ক্যান্সার রোগের ঝুঁকি কমাতে হলে সপ্তাহে দুই থেকে তিন দিনের খাদ্য তালিকায় হাঁসের ডিম অবশ্যই রাখতে হবে।
  • হাঁসের ডিম আমাদের হজম ক্ষমতাকে বৃদ্ধি করতে অনেক সহায়তা করে।
  • এই উচ্চ প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার (হাঁসের ডিম) ওজন কমাতেও সাহায্য করে থাকে।
  • দেহের হাড় মজবুত এবং হাড়ের শক্তি বৃদ্ধি করতে হলে হাঁসের ডিম খাওয়া উচিত
  • হার্টের কর্মক্ষমতা বাড়াতে এবং হার্টকে সুস্থ রাখতে হলে হাঁসের ডিম খাওয়া উচিত।

হাঁসের ডিম খাওয়ার অপকারিতা

এতক্ষণ আমরা হাঁসের ডিমের অনেক উপকারিতা এবং পুষ্টিগুণ সম্পর্কে জেনেছি। এবার জানবো হাঁসের ডিম খাওয়ার অপকারিতা বা ক্ষতিকর দিক। আসলে পর্যবেক্ষণ করলে দেখা যায় যে, হাঁসের ডিম খেলে শুধুমাত্র উপকারিতায় পাওয়া যায়। তবে অনেকেরই এটি অজানা যে, ডিমের কিছু সংখ্যক অপকারিত আছে তা হোক হাঁসেরই ডিম। আসলে বিষয়টা হচ্ছে এমন যে, কোন কিছুই অতিরিক্ত খাওয়া শরীরের জন্য ক্ষতিকরও হতে পারে।

  • হাঁসের ডিম খেলে কিছু কিছু মানুষের এলার্জির প্রবণতা বেড়ে যায়। যাদের এরকম সমস্যা আছে তাদের হাঁসের ডিম এড়িয়ে চলাই ভালো।
  • কিছু কিছু মানুষের ক্ষেত্রে হাঁসের ডিম খেলে তাদের ডায়রিয়া বা বমির মতো বিভিন্ন সমস্যা দেখা দিতে পারে।
  • হাঁসের ডিম অতিরিক্ত খেলে আপনার দেহের প্রয়োজনের তুলনায় বেশি পুষ্টিগুণ বেড়ে গেলে এতে ক্ষতির সম্ভাবনাও থেকে যায়। তাই যে কোন খাবার পরিমাণ মতোই খাওয়া শ্রেয়।
  • হাঁসের ডিমে অতিরিক্ত কোলেস্টরেল থাকার কারণে যাদের কোলেস্টরেলের সমস্যা রয়েছে এবং যাদের হৃদরোগ ডায়াবেটিস এ ধরনের সমস্যা আছে তাদের অনেক ক্ষেত্রে এই ডিম খাওয়ার জন্য বিভিন্ন রকম সমস্যা হয়ে থাকে। তাই এ সকল সমস্যাগ্রস্থ মানুষদের জন্য চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী হাঁসের ডিম খাওয়া উচিত।
  • কিছু কিছু শিশুদের ক্ষেত্রে হাঁসের ডিম অনেকটা অনুপযোগী বলেই বিবেচনা করা হয়ে থাকে। তাই আপনার শিশুকে হাঁসের ডিম খাওয়ানোর পূর্বে অবশ্যই একজন অভিজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।

হাঁসের ডিম খাওয়ার নিয়ম

পুষ্টিতে ভরপুর হাঁসের ডিম খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতার পাশাপাশি আমাদের জানতে হবে হাঁসের ডিম খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে সঠিক তথ্য। নিম্নে এর সঠিক নিয়মগুলো যথাসম্ভব তুলে ধরা হলো।

  • অর্ধ সিদ্ধ ডিম অথবা কাঁচা ডিম খেলে সালমোনেলা নামক ব্যাকটেরিয়া আক্রমণ করে ডায়রিয়ার মত বিভিন্ন সমস্যা সৃষ্টি করে তাই কোন ভাবেই অর্ধ সিদ্ধ অথবা কাঁচা ডিম খাওয়া যাবেনা।
  • আধা কাঁচা অবস্থায় ভাজা ডিম কোনভাবেই খাওয়া যাবে না।
  • ভাজা ডিমে কোন প্রকার পুষ্টিগুণ বিদ্যমান থাকে না তাই আমাদের সব সময় সিদ্ধ ডিম খাওয়ার চেষ্টা করা উচিত।
  • রাত্রে ঘুমাতে যাওয়ার পূর্বে হাঁসের ডিম খেলে গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা দেখা দিতে পারে তাই রাতের এই সময়ে হাঁসের ডিম খাওয়া যাবেনা।
  • প্রতি একদিন পরপর একটি করে হাঁসের ডিম সিদ্ধ অবস্থায় খাওয়া উচিত।
  • যদি কোনো কারণে প্রতি একদিন পরপর হাঁসের ডিম খাওয়া সম্ভব না হয় সে ক্ষেত্রে অন্ততপক্ষে সপ্তাহে একটি দিন হাঁসের সিদ্ধ ডিম খাওয়ার নিয়ম করতে হবে।
  • হাঁসের ডিম খাওয়ার উপযুক্ত সময় হচ্ছে সকালের নাস্তায়, দুপুরের খাবারে অথবা বিকেলের নাস্তায়।

লেখকের মন্তব্য

আমার মতে প্রতিটি মানুষের যেকোনো খাদ্য গ্রহণের পূর্বে খাদ্যের পুষ্টিগুণ, ক্ষতিকর দিক এবং খাদ্যটি খাওয়ার সঠিক নিয়ম জেনে তারপর তা গ্রহণ করা উচিত। আমাদের আজকের আলোচনার প্রেক্ষাপটে আপনার কোন প্রশ্ন বা মতামত থাকলে অবশ্যই আমাদের কমেন্ট বক্সে কমেন্ট করুন এবং আমাদের এই পোস্টটি প্রচুর পরিমাণে শেয়ার করে আপনার প্রিয়জন এবং আশে পাশের মানুষদেরকেও হাঁসের ডিম খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত সবকিছু জানার সুযোগ করে দিন।
ধন্যবাদ

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url