পাথরকুচি পাতার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত

পাথরকুচি পাতার উপকারিতা ও অপকারিতা এবং পাথরকুচি পাতা খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে আমাদের আজকের পোস্টে আপনাদের সাথে বিস্তারিত আলোচনা করব। পাথরকুচি পাতা সম্পর্কে যদি আপনি জানতে চান তাহলে আজকের এই পোস্টটি আপনার জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ হতে চলেছে। আশা করি আমাদের সাথেই থাকবেন এবং সম্পূর্ণ পোস্টটি মনোযোগ সহ পড়বেন।
পাথরকুচি পাতার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত
'পাথরকুচি পাতা' এই নামের বৃক্ষটি আমরা অনেকেই চিনি। এবং এর সম্পর্কে প্রায় কমবেশি আমরা অনেকেই জানি। কিন্তু আমরা অনেকেই হয়তো পাথরকুচি পাতার উপকারিতা ও অপকারিতার সম্পর্কে অবগত নই। তো চলুন আজ জেনে নেই বিস্তারিত ব্যাখ্যা সহ এই বিষয়ে।

ভূমিকা

পাথরকুচি পাতার উপকারিতা এবং অপকারিতা সম্পর্কে জানতে হলে সর্বপ্রথম জানতে হবে এই পাতা সম্পর্কে। আদি কাল থেকেই কবিরাজদের এবং গৃহিণীদের পছন্দের তালিকায় রয়েছে বহু গুণে গুণান্বিত এই পাথরকুচি গাছের পাতা। ছোট থেকে বড় বেশিরভাগ অসুখের ক্ষেত্রেই এর ভূমিকা অপরিসীম শুধু জানতে হবে পাথরকুচি পাতা খাওয়ার সঠিক নিয়ম।

পাথরকুচি পাতা

এটি মূলত সবুজ পাতা বিশিষ্ট বহুবর্ষজীবী একটি ওষুধি উদ্ভিদ। যার প্রয়োগ সাধারণত বেশিরভাগ ঔষধাগারে হয়ে থাকে। পাথরকুচি দুই ধরনের হয়ে থাকে। এটির পাতা দেখতে প্রায় গোল আকারের হয়ে থাকে, যেটার বোটানিক্যাল নাম Berginia ligulata wall ফ্যামিলি saxifragaceae ।

এবং অপরটিকে বীরুৎ জাতীয় পাথরকুচি বলা হয়, যেটির বোটানিক্যাল নাম Kalanchoe pinnata (Lank)ফ্যামিলি Crassulaceae । আমাদের দেশে অনেক কবিরাজ ও মুরুব্বি গণেরা এটাকে আসল পাথর কুচি বলে থাকে। কিন্তু ইউনানী সম্প্রদায়ের যারা আছেন তারা পূর্বের টিকে আসল বলে দাবি করেন। পাথর কুচি গাছ মূলত অনেক উপকারী একটি উদ্ভিদ যেটির উচ্চতা সাধারণত প্রায় দের থেকে দুই ফিট হয়ে থাকে।

এই উদ্ভিদের পাতা অনেকটা মসৃণ হয়ে থাকে, দেখতে ডিমাকৃতির মত পাতাটি, পুরু হয়ে থাকে, পাতাটির আশেপাশে ছোট গোল গোল খাঁজ হয়ে থাকে, এটিতে খাঁজ থাকার ফলে এই খাঁজ থেকে নতুন উদ্ভিদ জন্মায়। বহু গুণে গুণান্বিত পাথরকুচি পাতার উপকারিতা ও অপকারিতা এবং এটি খাওয়ার নিয়ম, পাথরকুচি পাতার ঔষধি গুন, পাথরকুচির চারা তৈরি ইত্যাদি সম্পর্কে থাকছে আমাদের আজকের আলোচনায়।

পাথরকুচি পাতার ঔষধি গুন

পাথরকুচি পাতার ঔষধি গুন সম্পর্কে যত বলা যায় ততই কম। চিকিৎসা ক্ষেত্রে আদিমকাল থেকেই ঔষধি গাছ হিসেবে ব্যবহার হয়ে আসছে পাথরকুচি। এটি একটি ঔষধি গাছ হওয়ার ফলে এর অনেক ওষুধই গুণ রয়েছে। তাই বলা যায়, সাধারণত পাথরকুচি পাতা কবিরাজদের ওষুধ তৈরি এবং গৃহিণীদের ঘরোয়া ঔষধ হিসেবে ব্যবহার করা হয়ে থাকে। জানা বাহুল্য যে ঔষধ তৈরীর জন্য মূলত এই গাছের শুধুমাত্র পাতাই ব্যবহৃত হয়ে থাকে। তবে ঘরোয়া প্রয়োগের ক্ষেত্রে জানতে হবে শুধু সঠিকভাবে পাথরকুচি পাতা খাওয়ার নিয়ম।

পাথরকুচি পাতার উপকারিতা ও অপকারিতা

সর্বগুণে গুণান্বিত এই পাতার সম্পর্কে বিস্তারিত অনেক কিছুই বা ইতিহাস আমরা জানলাম এবার জেনে আসি এর উপকারিতা ও অপকারিতা সমূহের মধ্যকার শুধুমাত্র উপকারিতা গুলো।

উপকারিতা সমূহঃ নিচে সংক্ষিপ্ত আকারে পাথরকুচি পাতার উপকারিতা সমূহ উল্লেখ করা হলো।
কিডনির পাথর অপসারণ করতে সাহায্য করে।
  • শিশুদের পেটের ব্যথা কমাতেও এর ভূমিকা অপরিসীম।
  • লিভারের সমস্যা দূর করে স্বাভাবিক জীবন যাপন করতে সাহায্য করে।
  • পুরনো সর্দি সারাতেও এর ভূমিকা রয়েছে।
  • পিত্তথলির রোগ সারিয়ে তুলতে সাহায্য করে।
  • খোসপাঁচড়া ফোড়া প্রতিরোধে এর কার্যকারিতা রয়েছে।
  • পাথরকুচি পাতা চোখের জন্য অনেক উপকারী।
  • মাথা ব্যথা দূর করে।
  • মূত্রনালীর সংক্রমণ থেকে রক্ষা করে।
  • পাথরী রোগের রুগীদের ক্ষেত্রে এটা অমৃত সমতুল্য কাজ করে থাকে।
  • গলগন্ড রোগের ক্ষেত্রেও এর উপকারিতার কমতি নেই।
  • কাটা ছেঁড়া স্থানে ম্যাজিক এর মত কাজ করে পাথরকুচি পাতার রস।
  • পাইলস রোগের চিকিৎসায়।
  • ওজন কমাতেও এর জুড়ি নেই।
  • পেট ফাঁপার সমস্যা কমায়।
  • মৃগী রোগে তৎক্ষণাৎ সমাধান করে।
  • মেহ রোগ দূর করে।
  • ত্বকের যত্নে।
  • উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে করে।

অপকারিতা সমূহঃ পাথরকুচি পাতার উপকারিতা ও অপকারিতার মধ্যে এবার আসি অপকারিতা সমূহের আলোচনা করতে। পৃথিবীর প্রতিটা জিনিসেরই যদি ভালো দিক থাকে তবে তার কিছু খারাপ দিকও থেকেই থাকে। তাই আমরা বলতে পারি, পাথরকুচি পাতার যেমন নানান উপকারিতা রয়েছে তেমনি রয়েছে এর কিছু ক্ষতিকর দিক বা অপকারিতা। আপনাদের জানার সুবিধার্থে পাথরকুচি পাতার কিছু অপকার সমূহ নিম্নে উল্লেখ করা হলো।
  • পাথরকুচি পাতার অতিরিক্ত রস খাওয়ার ফলে অনেক ক্ষেত্রে পিত্তথলির সমস্যা দেখা দেয়।
  • পাথরকুচি পাতার রস অতিরিক্ত খাওয়ার কারণে অনেক ক্ষেত্রে মুখের স্বাদ নষ্ট হয়ে যায়।
  • খাবারের রুচি না থাকা বা খিদা না লাগার সমস্যাও সৃষ্টি হতে পারে।
  • এর অতিরিক্ত রস সেবনের ফলে মাঝে মাঝে দেখা দিতে পারে পেটের নানান ধরনের সমস্যা। যেমন - কলেরা, ডায়রিয়া ইত্যাদি।

পাথরকুচির চারা তৈরি 

পাথরকুচি পাতার উপকারিতা ও অপকারিতার যেমন কমতি নেই ঠিক তেমনি এর চারা তৈরীর মজার বিষয়েরও জুড়ি নেই। সবচেয়ে সহজ উৎপাদন পদ্ধতি হচ্ছে পাথরকুচি গাছের।মূলত এই উদ্ভিদের কোন বীজ হয় না। এর পাতা মাটিতে ফেলে রাখলে সে নিজে নিজেই চারাতে পরিণত হয়ে ওঠে। এই গাছের একটি পাতা থেকেই প্রায় পাঁচ থেকে দশটি চারা গাছ উৎপাদন করা সম্ভব। এই চারা গুলি ভেজা কাঁদাযুক্ত জায়গায় খুব দ্রুত বেড়ে ওঠে।

অর্থাৎ আমরা যদি একটি পরিপক্ক পাতা ছিড়ে তাকে কোন রসালো মাটিতে রেখে দেই তাহলে দেখতে পাবো যে, তার ধার থেকে বা কিনার থেকে ৫ থেকে ১০ টি বা তারও অধিক নতুন চারা গজাতে শুরু করবে। তবে শুধুমাত্র মাঝে মাঝে গাছে পানি দেওয়া ব্যতীত এর জন্য আমাদের কোন বিশেষ যত্ন নেওয়ার প্রয়োজন নেই। এতক্ষণ আমরা জানলাম পাথরকুচির চারা তৈরী সম্পর্কে। এবার জানবো এই পাতা খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে যা আমাদের জন্য জানা অনেক প্রয়োজনীয়।

পাথরকুচি পাতা খাওয়ার নিয়ম

  • ঠাণ্ডা বা সর্দি কাশি এড়াতে পাথরকুচি পাতার ভর্তা খেতে পারেন।
  • পাথরকুচির পাতা সারাদিনে দুই থেকে তিনবার চিবিয়ে অথবা রস করে খেলে, কিডনির পাথর থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব।
  • প্রতিদিন নিয়ম করে যদি এই পাতার রস গোলমরিচের গুড়ার সাথে মিশিয়ে খাওয়া যায় তবে অর্শ রোগ বা পাইলস থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।
  • যে কোন উপকারের জন্য চাইলে পাথরকুচি পাতা সরাসরিও চিবিয়ে খেতে পারেন।
  • কাটা ছেঁড়া বা ক্ষতস্থান শুকানোর জন্য পাথরকুচির পাতাকে হালকা গরম করে তাপ দিলে খুব দ্রুত ক্ষতস্থান শুকাতে শুরু করে।
  • শরীরের জ্বালাপোড়া কমানোর জন্য চাইলে পাথরকুচির পাতা বেটে বা পেস্ট করে তার রস আধা কাপ গরম পানির সাথে মিশিয়ে খেতে পারেন।
  • পাথরকুচি পাতার টাটকা রস যদি প্রতিদিন দুবেলা করে খেতে পারেন তবে আপনার যদি পিত্তথলির কারণে রক্তক্ষরণ হয়ে থাকে তা গোরা থেকে নির্মূল হবে।
  • তক ঠান্ডা, মসৃণ ও সতেজ রাখতে এবং ব্রণ থেকে মুক্তি পেতে মাঝে মাঝে পাথরকুচির পাতা বেটে তার প্রলেপ দিলে অনেক উপকার পাওয়া যায়।
  • আপনার যদি কলেরা, ডায়রিয়া অথবা রক্ত আমাশয়ের সমস্যা হয়ে থাকে তবে প্রতিদিন খালি পেটে জিরার গুড়া, ঘি এবং টাটকা পাথরকুচি পাতার রস পরিমাণ মতো একসাথে মিশিয়ে খেলে এ সকল রোগ থেকে মুক্তি পাবেন।
  • কিডনির সমস্যার সমাধানের জন্য শুধুমাত্র পাথরকুচি পাতার রসের সাথে মধুসহ গোলমরিচ ও অন্যান্য উপাদান মিশিয়ে খেতে পারেন। এবং এই একই উপায়ে রস খেলে জন্ডিস থেকেও মুক্তি পাওয়া সম্ভব।
  • প্রায় অনেক সময় দেখা যায় যে, অনেকেরই পেট ফাঁপা প্রসব আটকে যাওয়া বায়ু না সরার মতো সমস্যা দেখা দেয় এই সমস্যার সমাধানের জন্য হালকা গরম পানির সঙ্গে চিনি এবং পাথরকুচি পাতার রস একত্রে মিশিয়ে খেতে হবে।
  • এই পাতার কয়েক ফোটা রস কানের ব্যথায় দিলে উপকার পাওয়া যায়।

লেখকের মন্তব্য

আশা করি পাথরকুচি পাতার উপকারিতা ও অপকারিতার উপরোক্ত বিষদ আলোচনা থেকে আপনারা নিশ্চয়ই উপকৃত হয়েছেন। সাথেই পাথরকুচি পাতা খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে বিস্তারিত একটা ধারণা পেয়েছেন। তারপরও যদি আমাদের এই পোস্ট সম্পর্কে আপনার কোন প্রশ্ন থাকে বা কোন মতামত থাকে তাহলে অবশ্যই আমাদের কমেন্ট বক্সে অবশ্যই কমেন্ট করুন।
ধন্যবাদ

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url