একাদশীতে কি কি বর্জন করতে হবে - একাদশীর পারণ মন্ত্র

একাদশীতে কি কি বর্জন করতে হবে এবং নির্জলা একাদশীর মাহাত্ম এর বিষয়েই আমাদের আজকের বিষয়বস্তু। একাদশী পালনের মাধ্যমে মানুষ স্বাধীনতা, ধার্মিক আদর্শ এবং সংযম, অনুশাসনের গুণাবলী লাভ করে এবং একে-অন্যের সহযোগিতা ও সম্মানের মধ্যে মানুষের মধ্যে সামাজিক আদর্শ বৃদ্ধি লাভ করে।
একাদশীতে-কি-কি-বর্জন-করতে-হবে - একাদশীর-পারণ-মন্ত্র
আপনি যদি একাদশীতে কি কি বর্জন করতে হবে তা সম্পর্কে জানতে আগ্রহী হয়ে থাকেন তাহলে সম্পূর্ণ পোস্টটি মনোযোগ সহকারে পড়বেন। আশা করি আমাদের আজকের এই পোস্টটি আপনার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ হতে যাচ্ছে।

ভূমিকা

হিন্দুধর্মের একাদশী উপবাসের প্রাথমিক উদ্দেশ্য হলো মন ও শারীরিক ইন্দ্রিয় গুলির উপর নিয়ন্ত্রণ লাভ করা এবং মন ও দেহকে আধ্যাত্মিক উন্নতির দিকে পরিচালিত করা। এছারাও, উপবাসের সাথে যুক্ত বেশ কিছু সাস্থ্য উপকারিতা রয়েছে। একাদশীর দিন সূর্যোদয় থেকে পরের দিন সূর্যোদয় পর্যন্ত এই বিরতির সময়কালে উচ্চ প্রোটিন ও কার্বোহাইড্রেট যুক্ত খাবার যেমন, রবিশস্যের পরিবর্তে শুধু দুগ্ধজাত খাবার, ফল ও শাকসবজি খাওয়া যায়।

একাদশীর মাহাত্ম্য

হিন্দু পঞ্জিকা বা ক্যালেন্ডার অনুসারে একাদশী হচ্ছে প্রতি মাসের শুক্ল পক্ষের ও কৃষ্ণ পক্ষের একাদশ তম চন্দ্র তিথি বা দিন। প্রতিটি সময় এবং চাঁদের অবস্থান অনুসারে একাদশীর নির্ণয় করা হয়। এটি হিন্দু ধর্মের অর্থাৎ সনাতনীদের বৈষ্ণব সম্প্রদায়ের মধ্যে অত্যন্ত ভক্তিভরে পালিত হয়। এই দিনে বিষ্ণুর উদ্দেশ্যে বৈষ্ণব অনুসারিগণ উপবাস করে  উপাসনা করেন।
সাধারনত প্রতি বছরে ২৪টি একাদশী থাকে তবে কখনো কখনো অর্ধবর্ষে অতিরিক্ত করে দুটি একাদশীরও দেখা মিলে। ভাগবত পুরাণে বিষ্ণুর ভক্ত অম্বরীষের একাদশী পালনের কথা উল্লেখ করা আছে। একাদশী একটি পুণ্যতিথি হিসেবে বিবেচিত। একাদশীর মাহাত্ম্য হলো এই পবিত্র দিনের উপাসনার গুরুত্বপূর্ণতা এবং এই দিনে উপবাস পালনের মাধ্যমে ভগবানের আনুগ্রহত্ব অর্জন করা।

একাদশীর আত্মজ্ঞান সম্পর্কে বিভিন্ন পুরাণ এবং গ্রন্থ সমূহে বর্ণিত হয়েছে এবং এই দিনে উপবাস ও পূজা করার মাধ্যমে মানুষ দৈবিক শক্তির অনুগ্রহ প্রাপ্তি হয়। একাদশীর মাহাত্ম্য কথায় উল্লেখিত হয়েছে যে, যে ব্যক্তি একাদশীতে উপবাস করে এবং ভগবানের পূজা ও স্মরণ করে, তার মুক্তি প্রাপ্তির সম্ভাবনা বেশি। তবে নির্জলা একাদশীর মাহাত্ম্য বিষেশ বলে গণ্য করা হয়েছে।

একাদশীতে শ্রী বিষ্ণুর পূজা অর্চনা করা হয় এবং ভগবানের আনুগ্রহত্ব অর্জনের জন্য আত্মীয়তা পূর্ণ মনোভাবের সাথে একাদশীর দিন যাপন করা হয়। একাদশী পারণের উদ্দেশ্য মানুষের দৈহিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের পরিচ্ছন্নতা বা শুদ্ধি এবং এই দিনে ধার্মিক আদর্শ অনুসরণের ফলে দৈনিক শক্তির প্রতি স্বাধীনতা অর্জুন ও আকর্ষণ বারে।

একাদশীর সবচেয়ে বড় বিষয় হচ্ছে সংযম অর্থাৎ, একাদশীতে কি কি বর্জন করতে হবে তা জেনে সেই সব কিছু থেকে দূরত্ব বজায় রাখতে হবে। অনেক পুরাণ এ বলা হয়েছে যে, একাদশী উপবাস পালনের মাধ্যমে মানুষ সকল পাপ থেকে মুক্তি লাভ করে এবং ভগবান ও তার দেখিয়ে দেয়া ধার্মিক আদর্শের প্রতি মানুষের অন্তর স্থিরতা অর্জন করে।

একাদশী উপবাসের সময় ঐ দিনে ধর্মগ্রন্থ পাঠ এবং পূজা করা হয়। সর্বোপরি বলা যায় একাদশী উপবাসের মাধ্যমে মানুষ নিজেকে ধর্মের প্রতি আকর্ষিত ও আবদ্ধ করে ধর্মীয় সাধনার পথে নিজের অগ্রযাত্রা শুরু করার ক্ষমতা রাখে।

একাদশী পালনের উপকারিতা

প্রাচীন কাল থেকে বলা হয়ে আসছে একাদশী দিনে উপবাস করা সব থেকে ভালো এবং এটি যোগসংস্কৃতির একটি অংশ হিসেবেও পরিচিত হয়ে আসছে। সঠিকভাবে উপবাসের নিয়ম অনুসরণ করলে একাদশী পালনের উপকারিতা অনেকগুলো রয়েছে। একাদশীর উপবাস কোথায় না কোথাও যোগ বিজ্ঞানের সাথেও সম্পর্ক রাখে আর বর্তমান সময়ে আধুনিক বিজ্ঞানও কিন্তু যোগ বিজ্ঞানের অভিজ্ঞতার সঙ্গে সহমত পোষণ করছে।

তবে জানিয়ে রাখা উচিত যে, একাদশী পালনের ক্ষেত্রে নির্জলা একাদশীর মাহাত্ম্য বা পালনের উপকারিতা কয়েকগুণ বেশি হয়ে থাকে। আপনি যখন আপনার শরীরকে পর্যাপ্ত পরিমাণে তৈরি করে রাখেন তখন আপনার শরীরের ও মস্তিষ্ক সবথেকে ভালো কাজ করবে শুধুমাত্র তখন যখন আপনার পেট খালি থাকবে। শরীরের কিছু কিছু পরিশুদ্ধি ও সংশোধনের জন্য পেট খালি হওয়া দরকার অন্যথায় কোষীয় শুদ্ধিকরণ ঘটে না।

তবে এর পালনের জন্য আপনাকে একাদশীতে কি কি বর্জন করতে হবে তার সম্পর্কে সম্পূর্ণ ধারণা থাকতে হবে। নিয়মিত উপবাস পালনের মাধ্যমে আপনার স্বাস্থ্য সমস্যা ৬ সপ্তাহের মধ্যে কম করে তার ৫০ শতাংশ দূর হয়। এছাড়াও একাদশী পালনের উপকারিতা অনেক রয়েছে যা মানুষের শারীরিক, মানসিক এবং আধ্যাত্মিক স্বাস্থ্যের উন্নতি নিয়ে আসে।

একাদশী উপবাস পালনের ফলে অতিরিক্ত খাবারের পরিমাণ হ্রাস করা হয় যার ফলে প্রক্রিয়াগুলি উন্নত হয় এবং শারীরিক স্বাস্থ্য উন্নত হয় সাথে ধার্মিক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে মানসিক পরিছন্নতা এবং শান্তি অর্জিত হয়।
একাদশী পালনের ফলে মানুষের ধার্মিক আদর্শ ও মৌলিক মূল্যবোধ বৃদ্ধি হয় মানসিক শান্তি প্রদান করে উত্তেজনা- উদ্বেগ কমায়। একাদশীর দিন ভগবানের পূজা এবং স্মরণের মাধ্যমে মানুষ তার আধ্যাত্মিক প্রকৃতি উন্নত করতে পারে এবং দৈনিক শক্তিতে বিশ্বাস বৃদ্ধি হয় যা আধ্যাত্মিক বৃদ্ধি দিয়ে মানুষের আধ্যাত্মিক প্রবর্তন ঘটায়। একাদশীর পালনের উপকারিতা গুলো যদি চিহ্নিত করা যায় তবে এভাবে বলা যায় -
  • চৈত্র মাসের দুটি একাদশী ফলে ব্যক্তির সমস্ত পাপ নষ্ট হয় এবং মোক্ষ লাভ ঘটে।
  • বৈশাখ মাসের দুটি একাদশী পালন করলে প্রকৃত সমস্ত বাধা দূর হয় এবং ব্যক্তির পাপমুক্তি ঘটায় ও জীবনে আনন্দ নিয়ে আসে।
  • জ্যৈষ্ঠ মাসের নির্জলা একাদশী পালনের ফলে সমস্ত ব্রথ পূর্ণ হয়ে যায় এবং পারিবারিক সুখ লাভ হয়।
  • আষাঢ় মাসে দুটি একাদশী পালনের ফলে পারিবারিক কলহের অবসান ঘটে এবং মোক্ষ লাভ সহজ হয়ে ওঠে।
  • শ্রাবণ মাসের একাদশী পালনে সন্তান লাভ এবং ধন সংক্রান্ত সমস্ত সমস্যা দূর হয়।
  • ভাদ্র মাসের একাদশেদয় পালনের ফলে দুঃখ না সহ এবং পিতৃ পুরুষের স্বর্গলাভের কামনা পূরণ হওয়া সম্ভবনা পায়।
  • আশ্বিন মাসের একাদশী পালনের ফল হিসেবে পাপ মুক্তি ঘটে এবং ঐশ্বর্য লাভ সহজ হয়ে ওঠে।
  • কার্তিক মাসের একাদশী উপবাসে দুর্ভাগ্য মোচন ও যজ্ঞের ফল পাওয়া সম্ভব।
  • মাঘ মাসের একাদশী পালনের ফলে সাফল্য এবং যজ্ঞের সমান ফল লাভ হয়।
  • শ্রাবণ মাসের একাদশীতে দুর্ভাগ্য-দরিদ্রতা দূর করে এবং মুক্তি লাভ সম্ভব।

একাদশী পালনের নিয়ম

একাদশী পালনের মূল হল নিরন্তন ভগবানকে স্মরণ করে যাওয়া। আপনি যে নিয়মে একাদশী পালন করতে চান না কেন ভগবানকে নিরন্তর ভক্তি ভরে স্মরণ করে যাওয়া এবং ভগবানের কাছে সমর্পণ করে দেয়াই আপনার মূল কাজ হতে হবে। একাদশী পালনের কিছু সাত্বিক নিয়ম রয়েছে যা হলো।
  • সামর্থ অনুযায়ী দশমীতে একাহার গ্রহণ করে, একাদশীতে নীরাহার অর্থাৎ নির্জলা উপবাস কিংবা অনুগল্পক ব্যবস্থা গ্রহণ করে উপবাস পালন এবং পুনরায় একাহার অনুসরণ করা।
  • তবে অসমর্থক পক্ষে শুধুমাত্র যদি একাদশীর দিন অনাহার অনুসরণ করে একাদশী পালন করেন তা-ও সম্ভব। এছাড়া পূর্বে উল্লেখিত অনুকল্প গ্রহণ অর্থাৎ একাদশীতে পঞ্চ রবিশস্য বর্জন করে যদি আপনি অনুকল্প হিসেবে দুগ্ধজাত এবং ফলমূলাদি জাতীয় খাবারও গ্রহণ করা সম্ভব।
  • একাদশীর দিনে সমর্থ পক্ষে রাত জাগরণের বিধি উল্লিখিত রয়েছে। আচার্য বৃন্দের অনুমোদিত পঞ্জিকায় উল্লেখিত রয়েছে, যে সমস্ত একাদশী নির্জলা পালনের মেয়ে দেখতে আর রয়েছে সেগুলি সেভাবেই পালন করা সর্বোত্তম হবে যদি না পরিস্থিতি অসমর্থ পক্ষে চলে যায়।
  • একাদশীর দিন নিরাহার থাকার সাথেই কৃষ্ণ ভাবনায় মগ্ন থাকতে হয়।
  • খাদ্যশস্যের দিক বিবেচনা করলে ফলমূলাদি গ্রহণ করা যেতে পারে। যেমন - গোল আলু, মিষ্টি আলু, চাল কুমড়ো, পেয়ারা, পেঁপে, টমেটো, ফুলকপি ইত্যাদি তবে, খেয়াল রাখতে হবে পোকার সবজি অথবা শস্য যেন পঞ্চশস্যের অন্তর্ভুক্ত না হয়। অন্যান্য আহার হিসেবে কলা, দু্‌ধ, আঙ্গু্‌র, আপেল, আনারস, আমরা, শস্য, আখ, বেল, মিষ্টি আলু, নারিকেল, বাদাম ইত্যাদি সরাসরি অথবা শরবত বানিয়ে খাওয়া যাবে।
  • একাদশীর পরদিন সকালে পারণে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে অন্ন বা রুটি প্রভৃতি পঞ্চরবিশস্য (ভগবৎপ্রসাদ) গ্রহণ করে পারণ সম্পন্ন করতে হবে।

পারণ মন্ত্র

অজ্ঞান তিমিরান্ধস্য ব্রতেনানেন কেশব।
প্রসীদ সুমুখো নাথ জ্ঞানদৃষ্টিপ্রদো ভব।।

একাদশীতে অধিক হরিনাম জপ করবেন। (১৬ মালা/ ২৫মালা/ ততোধিক সংখ্যক)
একাদশী মাহাত্মপাঠ, শ্রীমদ্ভাগবত গীতা যথাযথ পাঠ, শ্রীমদ্ভাগবত অধ্যায়ন, ভগবানের লীলা মহিমা শ্রবণ, কীর্তন, স্মরণ, মনন প্রভৃতি করা উচিত।

মহাবিপদ হোক বা আনন্দ উৎসব, জননাশৌচ, মরণাশৌচ, শ্রাদ্ধ- যাই থাকুক না কেন সবকিছুতেই একাদশী পালন করার বিধান রয়েছে। সধবা, বিধবা, রজঃস্বলা নারী সকলেই একাদশী ব্রত পালন করতে পারবেন বলে 'বিষ্ণুপুরাণ' এ উল্লিখিত রয়েছে।

একাদশীতে কি খাওয়া যাবেনা

  • একাদশীতে পঞ্চ রবিশস্য অর্থাৎ পাঁচ প্রকার রবিশস্য গ্রহণ করতে নিষেধ করা হয়েছে:
  • ধান জাতীয় খাদ্য - চাউল, চিড়া, সুজি, পায়েশ, মুড়ি, চাউলের পিঠা, খিচুড়ি, খৈ, প্রভৃতি নিষিদ্ধ।
  • গম জাতীয় সকল প্রকার খাদ্য - আটা, সুজি, ময়দা, রুটি বা বিস্কুট, হরলিক্স জাতীয় প্যাকেটজাত পূর্ণ প্রভৃতি গম জাতীয় খাদ্য নিষিদ্ধ রয়েছে।
  • যব বা ভুট্টা জাতীয় খাদ্য - রুটি খোই ছাতু ইত্যাদি এই প্রকার সকল খাদ্য নিষিদ্ধ।
  • ডাল জাতীয় সকল খাদ্য যেমন - খেসারি ডাল, মুগ ডাল, ছোলা, আড়হরের ডাল, মসুরের ডাল, মাসকলাই ডাল, মটরশুঁটি, বরবটি, সিম প্রভৃতি।
  • কিছু নিষিদ্ধ তেল যেমন - সরিষার তেল, তিলের তেল, সয়াবিন তেল, পাঁচফোড়ন ও বাজারের প্যাকেটজাত মিশ্রণ বা গুঁড়ো ব্যবহার করা নিষিদ্ধ।
  • উপরোক্ত পঞ্চ রবি শস্যের কোনো একটি গ্রহণ করল একাদশীর পুণ্য ব্রত নষ্ট হয়ে যাবে।

একাদশীর খাদ্য তালিকা

একাদশীর খাদ্য তালিকা হিসেবে বিবেচিত হয় মূলত ফলমূলাদি অথবা কিছু নির্দিষ্ট শাকসবজি। এগুলো চিহ্নিত করে উল্লেখ করলে দেখা যায়.
  • দুধ, আম, কাঁঠাল, লিচু, কলা, আপেল, আঙ্গুর, আনারস, আঁখ, আমড়া, তরমুজ, মিষ্টি আলু, বেল, চিনা বাদাম, কাজু বাদাম, কাঠবাদাম ও লেবু শরবত প্রভৃতি ফলমূলাদি।
  • গোল আলু, মিষ্টি আলু, চাল কুমড়ো, মিষ্টি কুমড়া, পেঁপে, ফুলকপি, বাঁধাকপি প্রভৃতি সবজি ঘি অথবা বাদামের তেল বা সূর্যমুখী তেল দিয়ে রান্না করে ভগবানকে উৎসর্গ করে আহার করতে পারেন এবং অবশ্যই লবণ ব্যবহার্য।
  • এছাড়াও জিরা অথবা জিরার গুঁড়ো বা হলুদের গুঁড়ো ব্যবহার্য হিসেবে উল্লেখিত। কাঁচা কলা বা সাবুদানা বা পাঁচমিশালী সবজি রান্না করে খাওয়া যেতে পারে।
  • এছাড়া একাদশীর পরদিন পারণের নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে অন্য বা রুটি গ্রহণ করে পারণ সম্পন্ন করা যায়।

একাদশীতে কি কি বর্জন করতে হবে

একাদশী পালনে যেভাবে খাদ্য তালিকার মধ্যে পঞ্চ রস্য বর্জনীয় সেভাবেই আমাদের আচরণ কিছু আনুগত্য আনার জন্য বিশেষ কিছু দিক বর্জন করতে বলা হয়েছে। একাদশীতে কি কি বর্জন করতে হবে তা নিম্নে উল্লেখ করা হল।
  • একাদশীর দিন একাদশী উপবাস পালন করার জন্য আগের দিন রাতে দন্তমার্জন করতে হবে এবং রাত ১২টার পূর্বেই অন্ন ভোজন করে নিতে হবে যেন মুখ গহ্বরে অংশবিশেষ লেগে না থাকে।
  • একাদশীতে রক্তক্ষরণ নিষেধ তাই সবজি বা অন্যান্য জিনিসপত্র কাটার সময় সতর্ক থাকতে হবে।
  • একাদশীর দিন মনকে শান্ত শান্ত রাখার জন্য ওই একাদশী রথ মাহাত্ম্য পাঠ বা শ্রবণ করতে হবে যেন অন্য জাগতিক চিন্তার দিকে মন বিমুখ না হয়।
  • একাদশীর দিন প্রসাধনী ব্যবহার নিষিদ্ধ
  • একাদশীতে শরীরে বা চুল তৈলমর্দন নিষিদ্ধ।
  • একাদশীতে সুগন্ধি সাবান, শ্যাম্পু, সুগন্ধি দ্রব্য বা পারফিউম ব্যবহার নিষিদ্ধ তবে শৌচ কাজের জন্য সাবান/হ্যান্ডওয়াশ ব্যবহার্য।
  • একাদশীতে ক্ষৌরকর্ম নিষিদ্ধ। যেমন, চুল, নখ, দাঁড়ি কাটা প্রভৃতি।
  • একাদশীতে পরনিন্দা, পরচর্চা, মিথ্যাভাষণ, ক্রোধ, দুরাচার, সহবাস বর্জনীয়।
  • একাদশীতে নিজে অন্ন ভোজন করা বা অন্যকে ভোজন করানো সমান পাপ।

নির্জলা একাদশীর মাহাত্ম্য

এতক্ষণ একাদশী পালনের নিয়ম ও একাদশীর খাদ্য তালিকা সম্পর্কে জানলাম। তবে নির্জলা একাদশীর মাহাত্ম্য নিয়ে আলোচনা করতে গেলে এর মধ্যে একাদশীর খাদ্য তালিকা সম্পর্কে কোন কথা আলোচিত হয় না। নির্জলা একাদশী মূলত জৈষ্ঠ শুক্ল পক্ষের এক একাদশী উপবাস যা ব্রহ্মবৈবর্ত পুরাণে বর্ণিত হয়েছে।

একদা শ্রী ব্যাসদেব বলেন, "এই কলিযুগের মানুষের পক্ষে সমস্ত ধর্মকথা পালন করা অত্যন্ত কঠিন"। তিনি আরোও বলেন - "জৈষ্ঠ মাসে শুক্লপক্ষে একাদশী তিথিতে জলপান পর্যন্ত না করে সম্পূর্ণ উপবাস থাকবে। এই দিনে অন্নাদি গ্রহণ করলে ব্রতভঙ্গ হয়। একাদশীর দিন সূর্যোদয় থেকে দ্বাদশীর দিন সূর্যাস্ত পর্যন্ত জলপান বর্জন করলে অনায়াসে বারোটি একাদশীর ফল লাভ হয়।"

একটি পূর্ণ বছরে মোট ২৪টি একাদশী তিথি থাকে এবং নির্জলা একাদশী তিথি গুলোর মধ্যে শ্রেষ্ঠ একাদশী তিথি হিসেবে পালিত হয়। নির্জলা একাদশী উপবাসের দিনে নির্জল থেকে অর্থাৎ কোন আহা গ্রহণ না করে কোন জল গ্রহণ না করে বিষ্ণুর আরাধনা করার রীতি রয়েছে। এই একাদশী উপবাস পালনের ফলে দীর্ঘায়ু প্রাপ্তি এবং মোক্ষ লাভ করা সহজ হয়ে ওঠে।
এছাড়াও স্বাস্থ্যে বর্ণিত রয়েছে একাদশী উপবাস পালন করলে মানবদেহের একাদশ ইন্দ্রিয় বশীভূত হয়। একাদশ ইন্দ্রিয় গুলো হলো: পঞ্চ কর্মেন্দ্রিয়, পঞ্চ জ্ঞানেন্দ্রিয় ও মন। অর্থাৎ নির্জলা একাদশী পালনের ফলে আমাদের শারীরিক সুস্বাস্থ্যের বিস্তার ঘটে এবং জ্ঞান এর বিস্তার ঘটে সাথেই ভগবানের আনুগত্য লাভ করে আমাদের মন পরিষ্কার ও পরিচ্ছন্ন হয়ে ওঠে।

লেখকের মন্তব্য

আশা করি আজকের আলোচনা থেকে আপনারা একাদশীতে কি কি বর্জন করতে হবে এবং নির্জলা একাদশীর মাহাত্ম্য সম্পর্কে বিস্তারিত সব কিছুই জেনেছেন। উপরোক্ত আলোচনার প্রেক্ষিতে আপনাদের কোন প্রশ্ন বা মতামত থাকলে আমাদের কমেন্ট বক্সে অবশ্যই কমেন্ট করুন। এবং আমাদের এই পোষ্টটি শেয়ার করে আপনার আশেপাশের মানুষদেরকেও একাদশীর বিষয় বস্তু জানার সুযোগ করে দিন।
ধন্যবাদ

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url