বট গাছের বৈশিষ্ট্য ও উপকারিতার বিস্তারিত তথ্য জানুন

বট গাছের বৈশিষ্ট্য ও উপকারিতার সম্পর্কে এবং সনাতন ধর্মে বটগাছের প্রয়োজনীয়তা নিয়ে আমাদের আজকের এই পোস্টে বিস্তারিত বিষয়বস্তু নিয়ে আলোচনা করা হলো। বট একটি পবিত্র উদ্ভিদ হিসেবে বিবেচিত হয় যা এর অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট বৈশিষ্ট্যের কারণে ইনসুলিন নিঃসরণ বাড়িয়ে রক্তে গ্লুকোজএর মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে।
বট গাছের বৈশিষ্ট্য ও উপকারিতা
আপনি যদি বটগাছ এবং বট গাছের বৈশিষ্ট্য ও উপকারিতার সম্পর্কে জানতে আগ্রহী হয়ে থাকেন তাহলে আমাদের আজকের এই পোস্টটি আপনার জন্যই। আশা করি আমাদের এই পোষ্টের মাধ্যমে আপনি বট গাছের ব্যবহার এবং ইতিহাস সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পারবেন।

ভূমিকা

বটগাছ একটি পবিত্র উদ্ভিদ হওয়া সাথেই ভারতের জাতীয় গাছ হিসেবেও পরিচিত। সনাতন ধর্মে বটগাছের প্রয়োজনীয়তা বিবেচনা করে মন্দিরের চারপাশে বটগাছ বেশি লাগানো হয়। ফলে এটি বিশ্বাসীদের দ্বারা পূজা করা হয়। এছাড়াও স্বাস্থ্যের ক্ষেত্রেও বটগাছের উপকারিতা অনেক। বট গাছের অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট বৈশিষ্ট্য আমাদের দেহে রক্তের গ্লুকোজের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে। এশিয়া মহাদেশের সর্ববৃহৎ বট বৃক্ষ ঝিনাইদহ জেলার কালীগঞ্জ থানার সুইতলা মল্লিকপুর গ্রামে অবস্থিত।

বটগাছ

বট তথা বটগাছের বৈজ্ঞানিক নাম Ficus বেংহালেন্সিস (ইংরেজি: Indian banyan) যা ফাইকাস বা (ডুমুর জাতীয়) গোত্রের ইউরোস্টিগ্মা উপগোত্রের সদস্য। এটি চিরহরিৎ সাইকাস বহু বর্ষজীবী উদ্ভিদ। বঙ্গভূমি অর্থাৎ বাংলাভাষী অঞ্চলগুলো এর আদি নিবাস। Moraceae গোত্রের চির সবুজ বৃক্ষ হল বটগাছ যার শাখা ছড়ানো থাকে এবং এর ঝুড়িগুলো মাটিতে নেমে এসে কাণ্ডের আঁকার নিয়ে স্তম্ভমূলে রূপান্তরিত হয়।

শীতকালের সময় অভ্যন্তরীণ ফিকাস গাছ স্থানভেদে স্থানান্তরিত করে এটি 40 বছর পর্যন্ত বাঁচে এবং আবহাওয়ার আবাসস্থলে আউটডোরে রোপণ করা ফিকাস গাছ কিংবা বটগাছ ১০০ বছরেরও বেশি সময় বাঁচে। বট গাছে আকৃতি বিশাল জায়গা জুড়ে ছড়িয়ে থাকে। একটি বৃক্ষের মাধ্যমে বিভিন্ন ধরনের প্রাণী এবং পাখিদের আশ্রয়স্থান হয়। এছাড়াও বট গাছে প্রচুর ঔষধি গুণ রয়েছে এবং ধারণা করা হয় এটি দীর্ঘায়ু সাথে জড়িত।

বট গাছের ফুল ও পাতার বৈশিষ্ট্য

বট গাছের পাতা মসৃণ, একান্তর, উজ্জল সবুজ, ডিম্বাকৃতি এবং এর কচি পাতাগুলো কিছুটা তামাটে হয়ে থাকে। একটি বয়স্ক বটগাছের পাতা সাধারণত আকারের দিক থেকে সময়ের সাথে সাথে ছোট হতে থাকে। সাধারণত বট হচ্ছে একটি দীর্ঘজীবী বিরাট ধরনের বৃক্ষ। এই গাছের সময়কাল সাধারণত ২০ বছর পর্যন্ত হয়ে থাকে।

একটি পরিণত বটগাছের পাতা কিছুটা ছোট হয়ে আছে এবং কুড়ি পাংশুটে হলুদ হয় এই দুটি স্বল্পায়ু উপপত্র পাতা গজালেই এগুলি ঝরে পড়ে। বটগাছের ঝুড়ি গুলো মাটির সমান্তরালে বাড়তে থাকে এবং ডালপালার ঝুড়ি গুলো মাটির দিকে নেমে কাণ্ডে পরিণত হয়। খুব অল্প বয়সেই বটগাছের ঝুড়িগুলো নামতে থাকে।
এভাবে বটগাছের ডালপালার ঝুড়িগুলো থেকে কাণ্ডে পরিণত হওয়ার মাধ্যমে ধীরে ধীরে তার চারপাশে বাড়ে এবং একটি সময়ে এসে মহীরুহে পরিণত হয়। সাধারণত বসত ও শরৎকালে বটগাছে নতুন পাতা গজায় এবং এর কচি পাতা রং গুলো উজ্জ্বল সবুজ বর্ণের হয়ে যায়। গ্রীষ্মকাল, বর্ষাকাল ও শীতকাল হলো বটগাছের ফল পাকার সময়। বটগাছের ফুল গুলো মঞ্জারির গর্ভে লুকানো থাকে।

এ ফুল গুলো ফলের মতোই গোল এবং খুবই ছোট হয়। প্রধান তো বট ও বজ জাতীয় গাছের বংশবৃদ্ধির পদ্ধতি ও কৌশল এর ফুলের মাধ্যমেই হয়ে থাকে। বড বৃক্ষের ফুল গুলো একলৈঙ্গিক যা পরাগায়ণের জন্য বিশেষ জাতের পতঙ্গের উপর নির্ভরশীল থাকে।

পাখিরা বট বৃক্ষের ফল খেয়ে এর বীজ ছড়িয়ে দিলে, পাখি বাহিত সেই বীজ দালানের কার্নিশ বা পুরনো দালানের ফটো ও অন্য কোন গাছের কোটরে সহজেই অঙ্কুরিত হয়। এজন্য বট গাছ কি উপকার আছে হিসেবেও খ্যাত করা হয়েছে। বট গাছের ফল শালী কাক ও বাদুড়দের প্রিয় খাদ্য এবং কিছু পাখি নিরবত আশ্রয়স্থল হিসেবে পরিচিত এ বটগাছ। যেমন শকুন ও এজাতীয় আরও পাখি। এছাড়াও এর পাতা রোগের জন্য বেশ উপকারী।

বট গাছের বৈশিষ্ট্য ও উপকারিতা

বটগাছ বাংলা অঞ্চলের আদিমতম বৃক্ষ। বটগাছ বিভিন্ন ধরনের প্রাণী ও পাখিদের আশ্রয় হিসেবে গণ্য হয় যা ভারত এবং বিভিন্ন জাতি ধর্মের লোকদের প্রতিনিধিত্ব করে। ভারতে বটগাছ কে পবিত্র হিসেবে বিবেচনা করা হয় এবং এজন্য প্রায়ই এই গাছের নিচে মন্দির বানানো হয়।

বটগাছ (Banyan) Moraceae গোত্রের একটি চির সবুজ খোঁজার বৈজ্ঞানিক নাম ফাইকাস বেংঘালেনসিস। এটি বৃহদাকার একটি গাছ যা জমির অনেকখানি জায়গা জুড়ে সমান্তরাল শাখা-প্রশাখা বিস্তার করতে পারে। খুব অল্প বয়সেই বট গাছের শাখা প্রশাখা থেকে কাণ্ডের উৎপত্তি দেখা যায় এবং অল্প সময়ের মধ্যে এটি মহীরুহে পরিণত হয়।

বটে নতুন পাতা সাধারণত বসন্তকাল ও শরৎকালে জন্মে। বট গাছের বৈশিষ্ট্য ও উপকারিতার বেশ বৃহদাকারে বর্ণিত। বটের পাতা কুষ্ঠ রোগের জন্য বেশ উপকারী সাথেই বটের আঠা শরীর শুষ্ক স্থানের জন্য বেশি উপকারী, যেমন এটি পারে ফাটা সরাতে সাহায্য করে এবং বটের ছাল এর সাহায্যে মানব দেহের মেদ কমানো সম্ভব।

বটগাছের বৈশিষ্ট্য ও উপকারিতা কোন না কোন ভাবে একে অপরের সাথে জড়িত। যেমন বটগাছের অংশবিশেষ বিভিন্নভাবে করলে বটগাছের উপকারিতা শেষ নেই। গরম করে মালিশ করলে হাড় মচকে যাওয়া থেকে আরাম পাওয়া যায়। বটগাছের বৈশিষ্ট্য ও অপকারিতা সাথে সনাতন ধর্মে বটগাছের প্রয়োজনীয়তা কোন গ্রুপের কারণে ভারতে জাতীয় বৃক্ষ হিসেবে মর্যাদা লাভ করেছে।

এছাড়াও এই কথা আমাদের জানার বাহিরে নেই যে বায়ু দূষণ ও বাতাসের ক্ষতিকর ধাতুর কারণে আমাদের রাজধানী ঢাকা প্রায়ই দূষিত শহরের শীর্ষ অবস্থান করে। তবে দূষণ থেকে বাঁচার জন্য তেমন কোন কার্যকরী পদক্ষেপ লক্ষণীয় নয়। বটগাছের বৈশিষ্ট্য ও উপকারিতা সম্পর্কে সঠিক জ্ঞান অর্জন প্রভাব ফেলতে পারে।

কারণ ভাবে শুধুমাত্র গাছই আমাদের পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করতে পারে। তাই বট গাছের বৈশিষ্ট্য ও উপকারিতা কে নজরে রেখে ঢাকা বিদ্যালয়ের একদল গবেষক তথ্য দিয়েছেন যে, রাজধানীতে বায়ু পরিশোধনের সহজ সমাধান হতে পারে শুধুমাত্র বটগাছ। রাজধানীতে দিন দিন আদি বৃক্ষের সংখ্যা কমেই আসছে।

বট গাছের বৈশিষ্ট্য ও উপকারিতার মধ্যে এর অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এর বৈশিষ্ট্য আমাদের শারীরিক স্বাস্থ্যের জন্য অনেক উপকারী। বটের ঘন-বড় পাতার সাহায্যে এটি বাতাসে থাকা ভারী ধাতু সহজেই ধরে রাখতে পারে। দূষণ পরিশোধনের জন্য বটগাছ হতে পারে সর্বোত্তম মাধ্যম। বট গাছের মাধ্যমে জল সংরক্ষণ হয়। প্রতিটি গাছের নিচে মাটিতে একটি বোলি রয়েছে যা মাটিতে পানি রাখতে সাহায্য করে এই পানি বৃষ্টিতে সংগ্রহ হয় এবং তার মাধ্যমে সেটি পূর্ণ ব্যবহার করে।

জল সংরক্ষণে বটগাছ সেই প্রক্রিয়াটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এছাড়া অক্সিজেন সরবরাহ করে কার্বন-ডাই-অক্সাইড নিঃসরণ করা বটগাছের উপকারিতা ও ভূমিকার অন্তর্ভুক্ত। বট গাছের শিকড় থেকে পাতা পর্যন্ত প্রতিটি অংশেই লুকিয়ে আছে এর নানা ধরনের ঔষধি গুণ এবং গুরুত্ব রোগ নিরাময়ের মহৌষধী গুণ।

বট গাছের ব্যবহার

বট গাছের বৈশিষ্ট্য ও উপকারিতা যেমন অব্যক্ত তেমনি প্রাচীনকাল থেকেই বটগাছ বহু ঔষধি কাজে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। বট গাছের ব্যবহার এ এ পাতা, বাকল, ফুল, ফল ব্যথা নাশক প্রদাহারি এবং চর্ম রোগের প্রাকৃতিক ঔষধি হিসেবে কাজ করে। এছাড়াও বট গাছের ছাল পোড়া আনসার এবং বেদনাদায়ক চর্ম রোগে উপকারী অন্য করা হয় এবং এটি প্রদাহ এবং দাঁতের ব্যথা ব্যবহার্য।

বট গাছের ফল প্রাণীদের জন্য, বটে ফুল পতঙ্গদের জন্য এবং বাকি অংশ মানবের বিভিন্ন কাজে ব্যবহৃত হওয়ার যোগ্য। বটের ফল বাদুড়, কাক ও শালিকদের প্রিয় খাদ্য। বটের ছায়া প্রকৃতির পাখিদের জন্য একটি নিরাপদ আশ্রয়স্থল। বটগাছ এতই পবিত্র বিবেচিত হয় যে এই গাছের ছায়াতে মন্দিরও নির্মাণ হয়ে থাকে তাই বলা যায় যে, সনাতন ধর্মে বটগাছের প্রয়োজনীয়তা বা বিশেষ মাহাত্ম্য রয়েছে।

বটের বাকোলের আঁশ দড়ি এবং অন্যান্য কাজের ব্যবহার্য এবং এর কস থেকে নিম্নমানের রাবার প্রস্তুত হয়। বটের পাতা কষ্ট রোগের জন্য ব্যাপক উপকারী। এছাড়াও বটগাছের আঠা পাটা সারা এবং ছাল সঠিক ব্যবহারে দেহের মেদ কমে। হাড় মচকে গেলেও বটগাছের ছাল থেকে এর নিরাময় পাওয়া যায়। একদা উদ্ভিদ বিজ্ঞানের অধ্যাপক সিএল নিগওয়াল বলেন, ভোট হলো এমন একটি উদ্ভিদ যাতে অ্যান্টি-মাইক্রোবিয়াল, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট উপাদান পাওয়া যায়।

এছাড়াও বটে হেনসেন, বুটানাল, এগিন অ্যালবুমিন, ম্যালিক অ্যাসিড, হাইপোগ্লাইসেমিক এর মতো অনেক উপাদান রয়েছে। এই উপাদান গুলি মানব দেহের বিভিন্ন মারাত্মক রোগ দূর করতে সহায়ক ভূমিকা পালন করে। আর বট গাছের বাকল পাতা এবং শিকার বিভিন্ন রোগের চিকিৎসার ক্ষেত্রে তো ব্যবহার হয়েই আসছে।

পাতার ব্যবহারঃ বিশেষজ্ঞদের মধ্যে চর্ম ক্ষেত্রের জন্য বটগাছের পাতা খুবই ভালো কাজ করে। গাছের পাতার ক্কাথ বানিয়ে ফোড়া ফুসকুড়ি এবং চুলকানির মতো আক্রান্ত বা ক্ষত জায়গায় লাগালে এর তাৎক্ষণিক উপশম পাওয়া যায়।

তাছাড়াও দেহের ভেতরের কিছু রোগ নিরাময়ের ক্ষেত্রে যেমন ডায়রিয়া, আমাশয় বা পেটের যেকোনো ধরনের রোগে বট গাছের ছোট নরম পাতা সমূহ বা শিকর এবং বাকল সহ একত্রে মিশিয়ে একটি পানীয় তৈরি করে সেবন করা যায়। এছাড়াও এটি কোলেস্টরেল নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে খুব বেশি কার্যকরী ভূমিকা পালন করে। গাঁটের ব্যথা সারাতেও বট গাছের পাতা খাওয়ার ভূমিকা অপরিসীম।

মুলের ব্যবহারঃ বটগাছের ঝুড়ি গুলো দন্ত-মঞ্জন হিসেবে ব্যবহার ব্যবহৃত হয় ফলে দাঁত ও মারি মজবুত হয়। এছাড়াও এই ঝুড়ি সেবনে রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায় এবং ডায়াবেটিসের সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। বট গাছ থেকে প্রাপ্ত দুধ মলম হিসেবে ব্যবহার করা যায়।

সনাতন ধর্মে বটগাছের প্রয়োজনীয়তা

প্রকৃতি ও হিন্দুধর্ম পরস্পর গভীর সংযোগ রক্ষা করে। সনাতন ধর্মে বটগাছের প্রয়োজনীয়তার ক্ষেত্র উল্লেখ করলে পৌরাণিক বিশেষ অনুযায়ী ব্রহ্মা-বিষ্ণু ও শিবের বাসস্থানের সঙ্গে বটবৃক্ষ জড়িত রয়েছে। সনাতন ধর্মে বট গাছের প্রয়োজনীয়তা অনেক রয়েছে।

সনাতন ধর্মে অটল সৌভাগ্য এবং স্বাস্থ্যের জন্য বটগাছ পুজিত হয়। এটাও বলা হয় যে অক্ষয় বটের পাতায় ভগবান শ্রীকৃষ্ণমারকন্ডে দর্শন দিয়েছিলেন এবং দেবী সাবিত্রী বটগাছে বাস করেন। প্রথমত কৃষ্ণ অবসর দিন বট গাছের পূজা অর্পণ করা হয় এবং সৌভাগ্য ও সুখ শাস্ত্রে বর্ণিত হয়েছে যে এই দিনে বট গাছের পূজা করলে সৌভাগ্য, স্থায়ী সম্পদ, সুখ ও শান্তি বিরাজ করে।

এমনকি এই দিনেই শনি মহারাজের জন্ম হয়েছিল। উল্লেখ্য চার ধরনের বটগাছ রয়েছে। সনাতন ধর্মের সাবিত্রী নামে একটি উৎসব সম্পূর্ণভাবে বটগাছ কে উৎসর্গ করা হয়। ভগবান শিবের মতো অসীম ক্ষমতাধারীও বটগাছের নিচে ধ্যান করতেন। তাই বলাই যায় সনাতন ধর্মে এই গাছের প্রয়োজনীয়তা অসীম।

বাংলাদেশের চট্টগ্রাম জেলার সীতাকুন্ড উপজেলার ভৈরব মন্দিরের পাশে এক বিশাল বটগাছ ভক্তদের কাছে অক্ষয়বট নামে পরিচিত। পুরাণমতে, গয় ছিলেন একজন ধার্মিক রাজা যার পিতার নাম ছিল অমূর্তরয়। তিনি যজ্ঞ আহুতির অবশিষ্টাংশ আহার করে শতবর্ষ উপাসনা করেন।
এতে ভারতবর্ষের তিনজন দেবতার মধ্যে অগ্রগণ্য অগ্নিদেব সন্তুষ্ট হয়ে তার প্রার্থনা মতে তাকে বেদ অধ্যয়ন করার অধিকার দেন। বরপ্রাপ্ত হয়ে তিনি আধিপত্য বিস্তারে সক্ষম হন এবং বিশাল এক যজ্ঞের আয়োজন করেন। এই যজ্ঞ কালে একটি বটবৃক্ষ চিরজীবী হয়ে যা অক্ষয়বট নামে পরিচিত।

বট গাছের ইতিহাস

বটগাছ আমাদের উপমহাদেশ তথা বাংলাভাষী অঞ্চলের প্রাচীনতম বৃক্ষ। শুধু আমাদের উপমহাদেশ নয়, বিষের অন্যতম বৃহৎ বৃক্ষ বট। এ চিরহরিৎ সাইকাস বহু বর্ষজীবী এক বৃক্ষ। এক সময় আমাদের উপমহাদেশের জনপদের ঐতিহ্য ছিল এই বটগাছ। ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ ও ইতিহাস-ঐতিহ্য অর্থাৎ কালের সাক্ষী হিসেবে দক্ষিণেশ্বর বহু জায়গায় বটগাছ কাটা নিষিদ্ধ।

বট গাছের সীমাহীন উপকারিতা ও এর ধর্মীয় গুরুত্ব বিবেচনায় ভারতের জাতীয় বৃক্ষ হিসেবে বটগাছ স্বীকৃতি পায়। আমাদের উপমহাদেশে অনেক কৃষি সন্ন্যাসী বটগাছের নিচে বসে সাধনা করেছেন এবং মধ্য বট গাছের নিচে বসে ঈশ্বরের ধ্যানে মগ্ন থাকতেন। এছাড়াও বাংলাদেশের অনেক ওলি আউলিয়ার মাজার বট গাছের ছায়ার তলেই রয়েছে।

বটগাছ কে কে আগ্রাসী গাছ হিসেবেও বর্ণনা করা হয় এবং অনেক ক্ষেত্রে উপভাষা হিসেবে বেড়ে ওঠে। বটগাছ নিজের ছায়া তলে আরেকটি বটগাছ কে জন্মাতে দেয় না। আমাদের অগ্রেশনে দেশের কত শত বটবৃক্ষ ইতিমধ্যে বিলীন হয়েছে তার সঠিক হিসাব নেই।

প্রায় 5 একক জায়গা জুড়ে বিস্তৃত বিশেষ সর্ববৃহৎ বটগাছটি ভারতের অল্পপ্রোধতপ্রদেশে অবস্থিত যার বয়স সাড়ে পাঁচশ বছরেরও বেশি। এছাড়াও বাংলার ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলার ইউনিয়নের মল্লিকপুরে অবস্থিত বটগাছটির সৌন্দর্য ও অতুলনীয় যা দেখতে দিনের পর দিন পর্যটকেরা চলে আসেন।শুধু উপমহাদেশই নয় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের ঐতিহ্যের সঙ্গেই বটবৃক্ষ মিশে আছে।

ভিয়েতনামে সর্ববৃহৎ বনসাই করা বটগাছটি রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডায় রয়েছে কোরাল গ্যাবেল্সের বটবৃক্ষ। ইন্দোনেশিয়ার কোর্ট অফ আর্ম বা জাতীয় প্রতীক হিসেবে বটবৃক্ষ স্থান পেয়েছে। প্রাচীনকাল থেকে বট বৃক্ষ মূলত হলো এক বিশালতারও ঐশ্বর্যের সম্মোহনীর, আশ্রয় দাতার অদম্য শক্তির ও কঠিনের বিপরীতে সহজ সরলতার ঝর-ঝাপটায় অদম্য শক্তি নিয়ে টিকে থাকার এক প্রতিক।

এছাড়াও ১৯৪৮ সালের ১৬ মার্চ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলা অনুষ্ঠিত হয় সাধারণ ছাত্র সভা তা থেকে ভাষা আন্দোলন বেগবান হয়ে ওঠে। ব্রিটিশ উপনিবেশমুক্ত হয়ে পাকিস্তান রাষ্ট্রের শুরুতে পূর্ব বাংলার রাষ্ট্রভাষা হিসেবে উর্দু ছাপিয়ে দেয়ার বিরুদ্ধে বাঙালি প্রতিবাদের সঙ্গে বটতলা জড়িয়ে রয়েছে। আরো রয়েছে বাঙালির ৬৯ এর গণঅভ্যুত্থান যা সূত্র পাতা হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বটতলা থেকেই। উপমহাদেশের ইতিহাসে ও সনাতন ধর্মে বট গাছের প্রয়োজনীয়তা সর্বক্ষেত্রে ছড়িয়ে রয়েছে।

লেখকের মন্তব্য

আশা করি আজকের বটগাছের আলোচনাভিত্তিক পোষ্টের মাধ্যমে আপনারা বট গাছের বৈশিষ্ট্য ও উপকারিতার সম্পর্কে এবং কোন ধর্মে বট গাছের প্রয়োজনীয়তা, বটগাছের ইতিহাস প্রভৃতি সম্পর্কে জানতে পেয়েছেন। উপরোক্ত আলোচনার প্রেক্ষিতে আপনাদের যদি কোন প্রশ্ন থাকে বা কোন মতামত জানাতে চান তাহলে অবশ্যই আমাকে কমেন্ট বক্সে কমেন্ট করুন এবং পোস্টটি শেয়ার করে আপনার আশেপাশের মানুষদেরকেও বটগাছের উপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত জানার সুযোগ করে দিন।
ধন্যবাদ

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url