এলার্জি দূর করার ঘরোয়া উপায় সমূহ জানুন
এলার্জি দূর করার ঘরোয়া উপায় এবং এলার্জি জাতীয় খাবার কি কি তা নিয়েই আমাদের আজকের এই পোস্টে রয়েছে বিশেষ আলোচনা যা আপনাদের জন্য উপকারী সাব্যস্ত হতে পারে। আপনারা যদি এলার্জি সম্পর্কে জানতে আগ্রহী হয়ে থাকেন তাহলে অবশ্যই মনোযোগ সহকারে আমাদের এই পোস্টটি পড়ুন।
এলার্জি খুব সাধারন একটি সমস্যা। যা প্রায় মানুষের আছে বলে শোনা যায়। এর জন্য শুধুমাত্র ওষুধ নয়, এলার্জি দূর করার জন্য ঘরোয়া কিছু উপায়ও অবলম্বন করা যায়। তাহলে চলুন আজ জেনে নেই এলার্জির সম্পর্কে বিস্তারিত সব কিছু।
ভূমিকা
এলার্জি হচ্ছে এমন একটি রোগ যা মানুষের শরীরে বিশেষ ধরণের প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করে থাকে। এলার্জির লক্ষণ হতে পারে চুলকানি, চোখের জ্বালা, চোখের পানি পড়া, চামড়ায় লালচে হওয়া, ত্বকের স্ক্রাচ ইত্যাদি। আজকের বিস্তারিত আলোচনায় আমরা জানবো এলার্জি কি, এলার্জি কত প্রকার ও কি কি, এলার্জির লক্ষণ, এলার্জি জাতীয় খাবার কি কি, এলার্জি জাতীয় বিভিন্ন সমস্যা, এলার্জি দূর করার ঘরোয়া উপায়।
এলার্জি কি
স্বাস্থ্যের সাধারণ সমস্যাগুলোর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে এলার্জি। এলার্জির সমস্যা গুলো সবার একই রকম হয় না। কিছু ক্ষেত্রে এটি খুব সাধারন একটি সমস্যা আবার কিছু কিছু ক্ষেত্রে এটি মৃত্যুর কারণও হতে পারে। এলার্জি অনেক রকমের হয়ে থাকে। এলার্জি হওয়ার সবচেয়ে বেশি প্রবণতা থাকে শৈশবকালে।
যদিও বা বয়সের সাথে সাথে এই লক্ষণগুলো কমতেও পারে।
আবার অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায় শৈশবে যদি এই এলার্জির সমস্যা নাও থাকে তবে পরবর্তীতে আক্রান্ত হওয়ার অসংখ্য অনেক ক্ষেত্রে হয়ে থাকে। মানব দেহের রোগ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার ত্রুটিকে এলার্জি বলা হয়। এক্ষেত্রে এলার্জি দূর করার ঘরোয়া উপায় জানা থাকলে কিছুটা হলেও স্বস্তি পায় রোগীরা।
এলার্জি কত প্রকার ও কি কি
এলার্জি কোন এক প্রকারের হয় না। বিভিন্ন বিষয়ের উপর এলার্জি হয়ে থাকে। কিছু কিছু মানুষের ক্ষেত্রে এলার্জিতে কোন ক্ষতি হয় না আবার অন্যদিকে কিছু কিছু মানুষ এর কষ্ট সহ্য করতে না পেরে মৃত্যুর মুখোমুখি ও চলে আসে। তাই এর থেকে মুক্তির জন্য আমাদের ভালো কোন চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়া উচিত এবং পাশাপাশি আমাদের জানা উচিত এলার্জি দূর করার ঘরোয়া উপায় সমূহ সম্পর্কে। এলার্জির অনেক প্রকারের মধ্যে কিছু প্রকারের এলার্জির নাম নিচে দেয়া হলো। যেমন-
- মৌসুমী এলার্জি
- ডাস্ট এলার্জি
- নিকেল এলার্জি
- টেক্সটাইল কন্টাক্টে এলার্জি
- এন্টিবায়োটিক এলার্জি
- পয়জন ইভি অ্যালার্জি
- মাছের এলার্জি
- এসি এলার্জি
- রক্তে এলার্জি
- খাবারে এলার্জি
- ঘ্রানে এলার্জি
- ঔষধে এলার্জি
- পরাগ রেনুতে এলার্জি
- পোষ্য প্রাণীতে এলার্জি
এলার্জির লক্ষণ
এলার্জির লক্ষণ যদি দেখা দেয় তাহলে অবশ্যই সর্বপ্রথম কোন ভালো চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে। যে লক্ষণসমূহ দেখলে আপনি বুঝতে পারবেন যে আপনার চিকিৎসকের কাছে যাওয়া উচিত তা নিচে উল্লেখ করা হলো।
- মাথা ঘোরা
- চুলকানি হওয়া
- রক্তচাপ কমে যাওয়া হাজী হওয়া
- শরীরে লাল লাল ফুসকুড়ি
- শরীরে বিভিন্ন জায়গায় চাকা চাকা হওয়া
- ঘ্রাণ অথবা নাক বন্ধ থাকা
- শরীরের কিছু কিছু অংশ যেমন ঠোঁট মুখি হবা গোলাপ ফুলে যাওয়া।
- শ্বাসকষ্ট এবং শ্বাস নেওয়ার সময় শব্দ হাওয়া।
- হাঁচি কাশি শুকনো কাশি নাকও গলায় চুলকানি।
- চোখে চুলকানি চোখ থেকে পানি পড়া লাল হওয়া ফুলে যাওয়া।
এলার্জি জাতীয় খাবার কি কি
সাধারণত সব মানুষেরই ধারণা যে, শুধুমাত্র খাদ্যের মাধ্যমে এলার্জি শুরু হয়ে থাকে। তবে ব্যাপারটি আসলে এমন নয়। নির্দিষ্ট কিছু কিছু খাবার আছে যা সাধারণত মানুষের অ্যালার্জি তৈরি করতে পারে। কিন্তু সাধারণত সব মানুষেরই সব খাবারে অ্যালার্জি হয় না। এলার্জি জাতীয় খাবার কি কি তা নিম্নে দেয়া হলো।
- গরুর মাংস
- চিংড়ি মাছ
- ইলিশ মাছ
- বেগুন
- মিষ্টি কুমড়া
- দুধ
- বাদাম
- লাল রং জাতীয় সবজি
প্রত্যেক মানুষের একই ধরনের জিনিসে এলার্জি থাকতে হবে ব্যাপারটি আসলে এমন নয়। প্রতিটা মানুষের আলাদা আলাদা ধরনের খাবারে বা জিনিসের এলার্জি থাকতে পারে।শুধু খেয়াল রাখতে হবে যে, কোন ধরনের খাবার খেলে অথবা কোন ধরনের জিনিসের স্পর্শে আসলে এলার্জিজনিত সমস্যা দেখা দিচ্ছে। তাহলে সেই খাবার অথবা সেই জিনিসের কাছ থেকে দূরত্ব বজায় করে নিতে হবে। যাতে করে এলার্জি নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়।
এলার্জি নিয়ন্ত্রণে খাবারের তালিক
এলার্জি দূর করার ঘরোয়া উপায় এর প্রথম ধাপ হিসেবে ধরা যায় খাবারের তালিকা তৈরী করাকে। অর্থাৎ যেমন ভাবে কিছু খাবারের মাধ্যমে শরীরে এলার্জির সৃষ্টি হয় ঠিক তেমনি কিছু খাবার আছে যা খেলে মানবদেহের এলার্জি এবং এলার্জি জনিত সমস্যাগুলোকে নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব। নিম্নে এলার্জি নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য যে সব খাবার খেতে হবে তার তালিকা দেয়া হলো।
কলাঃ শরীরের যদি লাল রঙের ছোট ছোট র্যাস দেখা দেয় তাহলে কলা ছেলে উপকার পাওয়া যায়।
শসাঃ কোন খাবার খাওয়ার পরে যদি হঠাৎ করে শরীরে অ্যালার্জি সমস্যা শুরু হয় তাহলে সেই ক্ষেত্রে শসা এবং গাজর একসঙ্গে রস করে খেলে কিছুক্ষণের মধ্যেই উপকার পাওয়া যায়।
লেবু ও মধুঃ এক কাপ পানিতে লেবু এবং মধু একসাথে মিশিয়ে খেলে এটা শরীরের টক্সিক পদার্থ বের করে শরীরকে এলার্জি মুক্ত করতে সহায়তা করে।
গ্রিন টিঃ গ্রিন টিতে রয়েছে এন্টিঅক্সিডেন্ট এবং এন্টিহিস্টাসিন যা এলার্জি জাতীয় খাবার খাওয়ার কারণে উৎপাদিত সমস্যার রোধ করতে সহায়ক ভূমিকা পালন করে।
আদা এবং আদা চাঃ কাঁচা আদা এবং আদা দিয়ে তৈরি করা চা খেলেও এলার্জির সমস্যা থেকে কিছুটা হলেও স্বস্তি পাওয়া যায়।
ভিটামিন সি জাতীয় খাদ্যঃ শরীরে যেন ভিটামিন সি এর অভাব না দেখা দেয় সেই দিকে খেয়াল রাখতে হবে। তাই যাদের অ্যালার্জির সমস্যা আছে তাদের সব সময় ভিটামিন সি জাতীয় খাদ্য গ্রহণ করা উচিত।
প্রোবায়োটিক সমৃদ্ধ খাদ্যঃ শরীরকে এলার্জি থেকে দূরে রাখতে বা মুক্ত রাখতে প্রোবায়োটিক সমৃদ্ধ খাদ্য খেতে হবে। প্রবায়োটিক সমৃদ্ধ খাদ্য হচ্ছে - দই বা টক দই।
ক্যাস্টর অয়েলঃ এক কাপ সমান পানিতে ক্যাস্টর অয়েল মেশাতে হবে পাঁচ থেকে ১০ ফোটা, এই পানীয়টি যদি প্রতিদিন সকালে খাওয়া যায় তাহলে এলার্জির সমস্যা গুলো থেকে দূরে থাকা সম্ভব।
এলার্জি দূর করার ঘরোয়া উপায়
এলার্জি হলে অবশ্যই কোন ভাল চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়া উচিত। তবে এলার্জি দূর করার ঘরোয়া উপায় এর বিষয়গুলোও প্রত্যেকের জেনে রাখা উচিত। এলার্জি হলে এলার্জি থেকে মুক্তির উপায় অর্থাৎ অ্যালার্জি দূর করার ঘরোয়া কিছু উপায় নিচে দেওয়া হল।
- যেখানে এলার্জি হয়েছে সেখানে বেকিং সোডার পেস্ট প্রয়োগ করা যেতে পারে।
- এলার্জি যুক্ত স্থানে অ্যালোভেরার যদি সরাসরি লাগানো যায় তাহলে ত্বকের জ্বালাপোড়া এবং চুলকানি থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।নারিকেল তেল নিয়ে
- একটি বাটিতে কিছু পরিমাণ নারকেল তেল কুসুম গরম করে নিতে হবে তারপর ত্বকের যেখানে যেখানে এলার্জির প্রবণতা দেখা দিচ্ছে সেখানে লাগিয়ে নিতে হবে দু এক ঘণ্টার মধ্যেই উপকার পাওয়া যাবে।
- এলার্জি যুক্ত স্থানে টি ট্রি অয়েল লাগালেও অনেকটা উপকার পাওয়া যায়।
- যদি প্রতিদিন দিন ২ চামচ করে মধু খাওয়া যায় তবে এতে করে এলার্জির সমস্যায় উপকার পাওয়া যায়।
- ঠান্ডা জনিত এলার্জিকি প্রতিদিন অন্ততপক্ষে একবার করে খাবারের সঙ্গে এক চামচ ঘি মিশিয়ে খেলে ঠান্ডা জনিত এলার্জির সমস্যা থেকে উপকার পাওয়া যায়।
- রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে কালোজিরা চিবিয়ে অথবা বড়ি বানিয়ে খেতে পারেন এতে করে ঠান্ডা জনিত এলার্জির থেকে উপকার পাওয়া যায়।
- লেবুর শরবত অথবা লেবু চা খেলে ঠান্ডা জনিত এলার্জিতে উপকার পাওয়া যায়।
- পেয়ারা খাওয়াও হতে পারে এর জন্য খুবই উপকারী।
- চোখের এলার্জিচোখে দুই থেকে তিন ফোঁটা গোলাপজল। চোখে গোলাপ জল দেয়ার পর কিছুক্ষণ চোখ বন্ধ রাখতে হবে।
- এক গ্লাস পানিতে তিন চা চামচ লবণ পানি ভালোভাবে ফুটিয়ে নিতে হবে। তারপর ঠান্ডা হওয়ার পরে পরিষ্কার তুলা দিয়ে চোখ মুছে নিতে হবে। এতে করে চোখের চুলকানি ও যারা জ্বালাপোড়া থেকে আরাম পাওয়া যাবে।
- এলার্জির কারণে যদি চোখ ফুলে যায় বা লাল হয়ে যায় সে ক্ষেত্রে ঘন ঘন পানির ঝাপটা দিতে হবে তাহলে কিছুটা হলেও যন্ত্রণা থেকে উপশম পাওয়া যাবে।
- ধুলাবালির এলার্জিধুরাবালি যুক্ত স্থানে যদি যেতেই হয় সে ক্ষেত্রে ভালোভাবে নিজের ব্যবস্থা করে তারপর যেতে হবে যেন ধোলার স্পর্শে না আসা হয়।
- ঘরবাড়িতে যেন বেশি ধুলা না জমে সেদিকেই লক্ষ্য রাখতে হবে।
- ঘরবাড়ি কাপড়-চোপড় প্রয়োজনীয় জিনিসপাতি সবকিছু সব সময় পর পরিষ্কার ভাবে রাখতে হবে।
- বাহিরে কোথাও যেতে হলে অবশ্যই মাক্স পরিধান করতে হবে যাতে করে ধুলা নাকে প্রবেশ না করতে পারে।
লেখকের মন্তব্য
আশা করি আজকের এই পোষ্টের মাধ্যমে আপনারা এলার্জি দূর করার ঘরোয়া উপায় সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে উপকৃত হয়েছেন। উপরোক্ত আলোচনার প্রেক্ষিতে আপনাদের যদি কোন প্রশ্ন থাকে বা কোন মতামত জানাতে চান তাহলে অবশ্যই আমাদের কমেন্ট বক্সে কমেন্ট করুন। এবং আমাদের এই পোস্টটি শেয়ার করে আপনার আশেপাশের মানুষদেরকেও এলার্জি সম্পর্কিত বিস্তারিত সবকিছু জানার সুযোগ করে দিন।
ধন্যবাদ
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url