দ্রুত ডায়াবেটিস কমানোর ঘরোয়া উপায় সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন

দ্রুত ডায়াবেটিস কমানোর ঘরোয়া উপায় এবং ডায়াবেটিস রোগীদের নিয়ম শৃঙ্খলা সম্পর্কে আমাদের আজকের আয়োজন। এই পোস্টের মদ্ধে আমরা ছোট থেকে ছোট বিষয়গুলোকেও তুলে ধরার চেষ্টা করেছি। তাই বিস্তারিত জানতে সম্পূর্ণ পোস্টটি মনোযোগ সহকারে পড়ুন।
দ্রুত ডায়াবেটিস কমানোর ঘরোয়া উপায় সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন
সময়ের সাথে সাথে প্রতিনিয়ত ডায়াবেটিসে আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা বেড়েই চলেছে। তাই ডায়াবেটিস নিয়ে হতাশাগ্রস্থ মানুষেরও অভাব নেই। আজ চলুন জেনে নেয়া যাক ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখতে করণীয় কি কি।

ভূমিকা

ডায়াবেটিস থেকে মুক্তির জন্য অনেকে অনেক কিছুই করে থাকেন। অনেকেই আবার ঔষধ ছাড়াই ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখতে চান। তাই দ্রুত ডায়াবেটিস কমানোর ঘরোয়া উপায় সম্পর্কে বিস্তারিত বর্ণনা করার পূর্বে আমাদের জানতে হবে ডায়াবেটিস কি, ডায়াবেটিস কেন হয়, ডায়াবেটিসের লক্ষণ কি, ডায়াবেটিস রোগীর খাবারের তালিকা এবং ডায়াবেটিস রোগীদের নিয়ম-শৃংখলা সম্পর্কেও যার সবটাই পাবেন আমাদের আজকের এই পোস্টে।

ডায়াবেটিস কী

ডায়াবেটিস হচ্ছে এক ধরনের মেটাবলিক ডিজঅর্ডার। ডায়াবেটিসের বাংলা নাম হচ্ছে "মধুমেহ"। সাধারনত এসময় মানুষের শরীরে ইনসুলিন থাকে কিন্তু কাজ করতে পারে না। তাই বলা চলে স্বাভাবিকের চেয়ে রক্তে বেশি শর্করা বা সুগার থাকলে তাকে ডায়াবেটিস বলা হয়।

একবার ডায়াবেটিস দেখা দিলে তা নীরবেই নানান ভাবে মানুষের শরীরের ক্ষতি করতে থাকে। তাই ডায়াবেটিস যেন নিয়ন্ত্রণে থকে সেই চেষ্টায় মানুষ ভিন্ন ভিন্ন উপায় অবলম্বন করছে। এতে করে মানুষ নিজের অজান্তেই এমন কিছু কাজ করে বসে যাতে উপকারের চেয়ে কিছু কিছু ক্ষেত্রে অপকারই বেশী হয়ে যায়।

ডায়াবেটিস কেন হয়

আমাদের শরীরে প্যানক্রিয়াস নামক একটি গ্রন্থি আছে যার কাজ হচ্ছে আমরা যে খাবার খাই তার অতিরিক্ত গ্লুকোজ কমিয়ে দেওয়া। যখন এটি আমাদের শরীরের অতিরিক্ত গ্লুকোজ কমাতে পারেনা তখনই সৃষ্টি হয় ডায়াবেটিসের। নিম্নে ডায়াবেটিস হওয়ার কারণগুলো সংক্ষিপ্ত আকারে প্রকাশ করা হল।
  • ফাইবার যুক্ত খাবার প্রয়োজনের তুলনায় কম খেলে।
  • মাত্রাতিরিক্ত দুশ্চিন্তাও হতে পারে ডায়াবেটিসের কারণ।
  • তামাক জাতীয় দ্রব্য গ্রহণ করার ফলেও ডায়াবেটিস হয়ে থাকে।
  • দেহের অতিরিক্ত ওজন বৃদ্ধি হলে।
  • খাদ্যাভ্যাস এর ক্ষেত্রে চিনির পরিমাণ বেশি থাকলে।
  • পূর্বে গর্ভাবস্থায় ডায়াবেটিস থেকে থাকলে।
  • কিছু কিছু ক্ষেত্রে বংশসূত্রে কারো যদি ডায়াবেটিস থেকে থাকলে সেই ক্ষেত্রেও ডায়াবেটিস হওয়ার আশঙ্কা থাকে।
  • শারীরিক পরিশ্রম যদি কম করা হয় সেই ক্ষেত্রেও ডায়াবেটিস হতে পারে।

ডায়াবেটিস রোগের লক্ষণ

ডায়াবেটিস একটি অস্তিত্ব বা ইনসুলিন নির্ভর রোগ এবং এটির লক্ষণ অধিকাংশই দ্রুত ও অস্তিত্বকারী হতে পারে। তাদের মধ্যে কিছু মৌলিক লক্ষণ হলেও, ডায়াবেটিসের একজন ব্যক্তি মৌলিক বা অবসাদকর অসুস্থতা অনুভব করতে পারেন। নিম্নে ডায়াবেটিস রোগের লক্ষণসমূহের সংক্ষিপ্ত বর্ণনা দেয়া হল।
  • চোখের দৃষ্টিশক্তি হ্রাস পাওয়া বা ঝাপসা দেখা।
  • হাত পা কেটে গেলে ক্ষতস্থান সহজে শুকোতে চায়না।
  • মাত্রাতিরিক্ত পিপাসা বোধ হওয়া।
  • কিছু কিছু ক্ষেত্রে স্পর্শের অনুভূতি না হওয়া বা কমে যাওয়া।
  • অতিরিক্ত ক্ষুধার অনুভূতি হওয়া।
  • দিন দিন ওজন কমতে থাকা
  • শরীরে অতিরিক্ত দুর্বলতা অনুভব করা।
  • কিছু কিছু ক্ষেত্রে দেহে ব্যথা অনুভব হয় না।
  • দিনে মাত্রাতিরিক্ত প্রস্রাবের চাপ অনুভূত হওয়া।
উপরোক্ত লক্ষণগুলি হলো ডায়াবেটিস রোগের সাধারণ লক্ষণ, তবে ডায়াবেটিসে আক্রান্ত প্রতিটি ব্যক্তি বিভিন্ন উপাধির অসুস্থতার পরিচয় দিতে সক্ষম হয়ে থাকেন। ডায়াবেটিসের যে কোনও  লক্ষণ অনুভব করলে বা দেখা দিলেই যত দ্রুত সম্ভব নিকটবর্তী চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া উচিত।

ডায়াবেটিস রোগীদের নিয়ম শৃঙ্খলা

  • প্রতিবেলার খাবার নিয়ম করে খেতে হবে। আপনি বেশি বা কম খাচ্ছেন না তো সেদিকেও খেয়াল রাখতে হবে।
  • প্রতি দু ঘণ্টা পর পর কিছু না কিছু খেতে থাকতে হবে।
  • ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণের অন্যতম পন্থা হচ্ছে হাঁটাচলা করা। কখনোই একটানা বসে থেকে কোন কাজকর্ম করা যাবে না যতটুকু পারা যায় হাঁটার চেষ্টা করতে হবে।
  • ধূমপান, অ্যালকোহল, ফাস্টফুড, কোমল পানীয় পরিহার করতে হবে। আর্সেনিকমুক্ত বিশুদ্ধ পানি পর্যাপ্ত পরিমাণে পান করতে হবে।
  • খাবারের তালিকা থেকে অতিরিক্ত লবণ ও চর্বি জাতীয় খাবার বাদ দিতে হবে। এবং প্রতিদিনের খাবার তালিকায় কিছু ফলমূল ও শাকসবজি যুক্ত করতে হবে।
  • আঁশযুক্ত গোটা শস্যজাতীয় খাবারের পরিমাণ বাড়াতে হবে। যেমন - লাল আটার রুটি, ঢেঁকি ছাটা চালের ভাত।

ডায়াবেটিস কমানোর ঘরোয়া উপায়

ঘরোয়া উপায়ে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ রাখতে খাবারের তালিকায় রাখুন নিচের এই কয়েকটি খাবার।

ঘৃতকুমারীঃ ঘৃতকুমারী অ্যালোভেরা নামেও পরিচিত।গবেষণায় দেখা গেছে ঘৃতকুমারীর রস পান করলে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে থাকে। আবার ডায়াবেটিস রোগীদের ক্ষত দ্রুত শুকাতেও এই ঘৃতকুমারী বা অ্যালোভেরার ভূমিকা অপরিসীম।

আদাঃ আদা তে রয়েছে অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট যা রক্তের গ্লুকোজের মাত্রা কমাতে সাহায্য করে। একজন ডায়াবেটিস রোগী যদি প্রতিদিন অল্প পরিমাণে কাঁচা আদা চিবিয়ে খাওয়ার অভ্যাস করতে পারে তবে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব।

চিরতাঃ শুকনো চিরতা রাতে ভিজিয়ে রেখে পরদিন সকালে খালি পেটে পান করলে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব।

মেহগনির বীজঃ মেহগনির ফলের বিচিতে রয়েছে অনেক গুনাগুন। মেহগনি ফলের বিচির ভেতরের সাদা শাঁস সারারাত পানিতে ভিজিয়ে সকালে খালি পেটে খেলে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে থাকে।

আমলকীঃ রক্তে শর্করার মাত্রা কমাতে আমলকির রস একটি অন্যতম ঘরোয়া পদ্ধতি। ডায়াবেটিসকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে প্রয়োজন অ্যান্টি-অক্সিডেন্টের, যা রয়েছে আমলকিতে

করলাঃ ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য খুব কার্যকরী একটি খাবার হল করলা। খালি পেটে করলার রস খাওয়ার অনেক উপকার পাওয়া যায়। আবার ভাতের সাথে খাওয়ার জন্য করলার সবজি, ভর্তা বা অন্য কোন রেসিপি দিয়েও খেতে পারে ডায়াবেটিস রোগীরা।

ডায়াবেটিস রোগীর খাবারের তালিকা

ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য খাবারের তালিকা সহজেই বলা যায় না, কারণ এটি ব্যক্তির ব্যক্তিগত প্রস্তুতি, মেডিকেল অবস্থা, প্রতিটি ব্যক্তির স্বাভাবিক জীবনযাত্রা এবং চিকিৎসার প্রচুর সংখ্যার উপর নির্ভর করে। তবে, একটি সাধারণ ডায়াবেটিস রোগীর খাবার তালিকা নিম্নলিখিতরুপী হতে পারে।
  • শাক - সবজি (লাউ, শিম, বাঁধাকপি, কলার গাছ পাতা ইত্যাদি)
  • মিষ্টি আপেল, কোলা, তরমুজ, কমলা, আম, গুলাব মাকড়সা, পেয়ার ইত্যাদি।
  • লাল বা বাদামী চালের ভাত
  • চিকেন বা টার্কি (চামড়া ছাড়া)
  • ডাল (মুগ ডাল, মসুর ডাল)
  • মাছ, মাংস, ডিম, শিম ও অন্যান্য বীন, ডাল, বিভিন্ন ধরনের বাদাম
  • খাদ্যে কাঁচা ধনিয়া অথবা পুদিনা সহ থাকতে পারে।
  • লবণের পরিমাণ কম থাকতে হবে।
  • লাল আটার রুটি বা পাউরুটি, কোয়ার্ট, ওয়াল গ্রেন ইত্যাদি।
  • প্রতি দিন প্রচুর পানি খাওয়া গুরুত্বপূর্ণ।
  • অলিভ অয়েল, ক্যানোলা অয়েল, এবং মুসুর ডালের তেল ইত্যাদি।
  • ছোট পোর্শনে নিয়মিত খাবার খাওয়া গুরুত্বপূর্ণ।
  • উপাদানগুলি সঠিক অনুপাতে রয়েছে তা নিশ্চিত করতে গুরুত্বপূর্ণ।
এই খাদ্যের তালিকা প্রচুর ফাইবার, প্রোটিন, ওমেগা-3 ফ্যাট, বিটামিন এবং খনিজ সরবরাহ করতে সাহায্য করতে পারে এবং ডায়াবেটিস প্রবন্ধিত গ্লাইসেমিক ইন্ডেক্স সোজা রাখতে সাহায্য করতে পারে। তবে, ব্যক্তিগত চিকিৎসা প্রদানের জন্য ডাক্তারের সাথে অবশ্যই যোগাযোগ করতে হবে।

লেখকের মন্তব্য

আমাদের এই পোস্টটি পড়ে যদি আপনার ভালো লেগে থাকে এবং আপনি যদি বিন্দুমাত্রও উপকৃত হয়ে থাকেন তাহলে আমাদের পাশে থাকতে অবশ্যই আমাদের এই পোস্টটি আপনার বন্ধুবান্ধব পরিবার-পরিজন প্রিয় মানুষদের সাথে বেশি বেশি শেয়ার করুন। আপনার মত যেন তারাও প্রতিনিয়ত নতুন কিছু সম্পর্কে জানতে পারে আমাদের এই পোষ্টের মাধ্যমে। এবং আমাদের এই পোষ্ট সম্পর্কে আপনার মূল্যবান মতামত জানানোর জন্য আমাদের পোষ্টের কমেন্ট বক্সে অবশ্যই কমেন্ট করুন।
ধন্যবাদ

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url