আমিষ ও নিরামিষ খাবারের উপকারিতা এবং অপকারিতা সমূহ

আমিষ ও নিরামিষ খাবারের উপকারিতা ও অপকারিতা এ বিস্তারিত বিষয়বস্তু নিয়ে মূলত আজকের আমাদের পরবর্তীতে পোস্টটি লেখা হয়েছে। সাথে রয়েছে নিরামিষ খাওয়ার অপকারিতা এর ব্যাখ্যা। তাই আজকের এই পোস্টটি সাথে থাকো এবং সম্পূর্ণ পোস্টটি মনোযোগ সহকারে পড়ে আমি শুনি নিরামিষ খাবারের বিস্তারিত তথ্য জেনে নিন।
আমিষ ও নিরামিষ খাবারের উপকারিতা এবং অপকারিতা সমূহ
আমিষ ও নিরামিষ খাবার নিয়ে তর্ক-বিতর্ক আমাদের সমাজে বহুকাল থেকে চলে আসছে। কেউ আমিষ আবার কেউবা নিরামিষ খাবারের অপকারিতা নিয়ে চিন্তিত থাকে। এই সকল বিভ্রান্তি মেটাতে চলুন আজকের এই পোষ্টের মাধ্যমে আমিষ ও নিরামিষ খাবারের উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে জেনে নেয়া যাক।

ভূমিকা

আমিষ ও নিরামিষ এর ব্যাখ্যাতে সহজ ভাষায় আমরা বুঝে থাকি, সকল প্রাণীজ জাতীয় খাদ্য আমিষ আহার এর অন্তর্ভুক্ত খাবার এবং প্রাণীজ খাবার বা এর উৎস হতে বহির্ভূত খাবার কে নিরামিষ খাবার বলে। তবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে যেমন দুগ্ধজাত খাবার নিরামিষ আহারের মধ্যে পড়ে। আজকের এই পোস্টের বিস্তারিত আলোচনায় আমরা জানবো, নিরামিষ কি, আমিষ কি, আমিষ জাতীয় খাদ্যের কাজ কি, আমিষ ও নিরামিষ খাবারের উপকারিতা, নিরামিষ খাওয়ার অপকারিতা এবং আমিষ খাওয়ার অপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত সব তথ্য।

নিরামিষ কি

মূলত নিরামিষ হচ্ছে এমন একটি খাবার যা মাছ, মাংস, ডিম ইত্যাদি আমিষ উদ্ভিজ না খেয়ে শুধুমাত্র ভেষজ উদ্ভিজ খাওয়া কে বোঝানো হয়। এবং যদি শাব্দিক অর্থে বোঝানো হয় তাহলে বলা যায়, যে খাবারে আমিষ নেই তাকেই নিরামিষ বলে বা এই খাদ্যই হচ্ছে নিরামিষ খাদ্য। এভাবেও বলা যায়, যে সকল খাবার খাওয়ার জন্য রক্ত মাংসে গড়া কোন জীব বা অনুভূতিশীল প্রাণী হত্যা করা হয় না সে সকল খাবারকেই নিরামিষ খাবার বলে।

অর্থাৎ যে সকল খাদ্য আমরা মাটি থেকে বৃক্ষের মাধ্যমে পাই তাকেই নিরামিষ খাবার বলা হয়। প্রাণী থেকে পাওয়া ডিম কে আমি হিসেবেই ধরা হয় তবে মজার বিষয় হচ্ছে এটি যে গরু থেকে পাওয়া দুধ নিরামিষ। কেননা দুধ থেকে প্রাণ সৃষ্টি করা যায় না তাই সেই হিসেবে দুধ নিরামিষ। এবং যেহেতু যেকোনো প্রাণীর ডিম থেকে নতুন প্রাণের সৃষ্টি হয় তাই এটি আমি হিসেবে গণ্য।

আমিষ কি

আমিষ হচ্ছে এমন একটি পুষ্টি উপাদান যা মানব দেহের জন্য অতীব প্রয়োজনীয়। প্রতিগ্রাম আমিষে পাওয়া যায় ৪ কিলো ক্যালরি। পুষ্টির দিক থেকে দেখতে গেলে মানবদেহে আমিষের গুরুত্ব অপরিসীম। সাধারণত আমিষ দু প্রকার হয়ে থাকে। উদ্ভিজ আমিষ এবং প্রাণিজ আমিষ।

আমিষের পুষ্টিগুণ যখন আমরা উদ্ভিদ থেকে পাই সেইসব খাদ্যকে উদ্ভিজ আমিষ বলা হয়। যেমন - শস্যদানা, বাদাম, শিম, সিমের বিচি, পনির, সয়াবিন, মসুরের ডাল ইত্যাদি। এবং আমিষের পুষ্টিগুণ যখন আমরা প্রাণী দেহ থেকে পাই সে সকল খাদ্যকে প্রাণীজ আমিষ বলা হয়। যেমন - মাছ, মাংস, ডিম, দুধ ইত্যাদি।

আমিষ জাতীয় খাদ্যের কাজ কি

আমাদের মানব দেহ হাইড্রোজেন, অক্সিজেন, আমিষ, নাইট্রোজেন,। সালফার এবং কার্বন দ্বারা গঠিত। এর মধ্যে মানব দেহের জন্য সবচেয়ে প্রধান উপাদান হচ্ছে আমিষ। আমিষ জাতীয় খাদ্য থেকে দেহের রোগ প্রতিরোধকারি এন্টিবডি তৈরি হয়। বলা যায় যে, আমিষের কাজ হচ্ছে দেহের কোষ গঠনের ক্ষেত্রে সহায়তা করা। শরীরের রক্তের হিমোগ্লোবিন তৈরিতেও আমিষের ভূমিকা অপরিসীম। গবেষণায় জানা যায়, একজন সুস্থ মানুষেের অন্তত পক্ষে ৩০ - ৪৫ গ্রাম আমিষ গ্রহণ করা উচিত।

আমিষের অভাবে মানব দেহে অনেক রকমের রোগ হতে পারে। এর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে রক্তশূন্যতা যা আমিষের অভাবে হয়ে থাকে। আবার শিশুদের ক্ষেত্রে মেরাসমাস এবং কোয়াশিওরকর নামক রোগ সৃষ্টি হয়ে থাকে আমিষের অভাবে। বৃদ্ধদের ক্ষেত্রে আমিশের অভাবে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা অনেকাংশে কমে যায়। তাই এ সকল সমস্যা থেকে দূরে থাকতে হলে অবশ্যই আমিষ খাদ্য বা খাবার গ্রহণ করা উচিত।

আমিষ ও নিরামিষ খাবারের উপকারিতা

এতক্ষণ আপনারা জানলেন আমিষ এবং নিরামিষ কি এই সম্পর্কে। তাহলে চলুন এখন জেনে নেয়া যাক আমিষ ও নিরামিষ খাবারের উপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত সব তথ্য।

নিরামিষ খাওয়ার উপকারিতা

  • খাওয়ার হজমের ক্ষেত্রে নিরামিষ খাওয়ার খুব সহজেই হজম হয়ে যায়।
  • ত্বকের স্বাস্থ্য এবং ত্বকের সতেজতা বৃদ্ধি করতে নিরামিষ আহারের ঝুড়ি নেই।
  • নিরামিষ আহারের মাধ্যমে মানুষের শরীর এবং মানসিক দুই অবস্থাই সহজ ভাবে নিয়ন্ত্রণে থাকে।
  • মানবদেহের রক্তে শর্করার পরিমাণ কমিয়ে ডায়াবেটিস রোগের ঝুঁকি কমাতে সহায়তা করে।
  • উদ্ভিদ চর্বিতে সাধারণত কোনরকম কোলেস্টরেল পাওয়া যায় না। তাই যাদের কোলেস্টরেলের সমস্যা রয়েছে তাদের জন্য নিরামিষ আহার করা খুবই উপকারী।
  • নিরামিষ খাদ্য গ্রহণ করলে মানুষের হৃদরোগের ঝুঁকি কমে।
  • অর্থের দিক থেকেও চিন্তা করলে আমিষের তুলনায় নিরামিষ অনেক সাশ্রয়ী।
  • নিরামিষ আহারে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে নিরোগ বা সুস্থ জীবন যাপন করা সম্ভব।
  • ধর্মীয়ভাবে দেখতে গেলে যে সকল ব্যক্তিরা নিরামিষ আহার করে তাদের মধ্যে লোভ, হিংসা, ক্রোধ এসব বাকিদের তুলনায় একটু কম দেখতে পাওয়া যায়।

আমিষ খাওয়ার উপকারিতা

আমিষ মূলত দু প্রকার তা আমরা জেনেছি। উদ্ভিজ আমিষ এবং প্রাণীজ আমিষ দুটোই আমাদের শরীরের জন্য সমানভাবে কাজ করে থাকে। নিম্নে এর উপকারিতা সমূহ উল্লেখ করা হলো।
  • দাঁত, নখ এবং হাড় মজবুত করতে আমিষের অনেক উপকারিতা রয়েছে।
  • শিশুদের দেহের বৃদ্ধির ক্ষেত্রেও আমিষের তুলনা নেই।
  • মানব দেহের ক্ষয়প্রাপ্ত কোষগুলোর ক্ষয় পূরণ করতে সাহায্য করে আমিষ।
  • আমাদের দেহে চর্বি এবং শর্করার অভাব হলে সেই অভাব পূরণ করতে আমিষের গুরুত্ব অপরিসীম।
  • দেহের পেশীর গঠনেও এর অনেক ভূমিকা রয়েছে।
  • চুলের পুষ্টি যোগা তেও আমিষের তুলনা নেই।
  • আমিষ শরীরে তাপ উৎপাদনে সহায়তা করে।
  • মস্তিষ্কের বা বুদ্ধির বিকাশে আমিষ প্রচুর পরিমাণে সহায়ক ভূমিকা পালন করে।
  • এটি দেহে রোগ সৃষ্টিকারী জীবাণুকে ধ্বংস করতে অর্থাৎ রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি করার জন্য এন্টিবডি তৈরি করে থাকে।
  • শরীরে আমিষ এর অভাবে সাধারণত যে সকল রোগ হয় সে সকল রোগ থেকে মুক্তি পেতে সহায়তা করে।

নিরামিষ খাওয়ার অপকারিতা

নিরামিষ খাদ্য যেমন স্বাস্থ্যের জন্য অনেক উপকারী তেমন কিছু কিছু ক্ষেত্রে এর কিছু সমস্যাও পাওয়া যায়। যদিও বা নিরামিষ খাওয়ার তেমন বড় ধরনের কোন অপকারিতা লক্ষ্য করা যায় না। তারপরও যে কয়েকটা সমস্যা নিরামিষ খাওয়ার কারণে দেখা দিতে পারে তার নিচে উল্লেখ করা হলো।
  • ধারণা করেন যে, কিছু কিছু ক্ষেত্রে নিরামিষ ভোজীদের শরীরে ভিটামিন বি ১২ এর অভাব দেখা যায়। যার কারনে স্ট্রোক হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়।
  • কিছু কিছু ক্ষেত্রে আইরনের ঘাটতি হওয়ার কারণে অ্যানিমিয়া বা রক্তশূন্যতার প্রভাবও দেখা যায়।
  • নিরামিষ আহারের কারণে কিছু কিছু ক্ষেত্রে মস্তিষ্কের শিরা দুর্বল হয়ে পড়ে যার কারণে এটি ছিড়ে গিয়ে মস্তিষ্কের ভেতর রক্তক্ষরণ হয়ে স্ট্রোক হতে পারে।
  • প্রোটিন এবং ভিটামিনের অভাবে শরীরে বিভিন্ন রকম দুর্বলতা দেখা দিতে পারে।

আমিষ খাওয়ার অপকারিতা

মানবদেহ গঠনের জন্য খাদ্যের তালিকায় আমিষ একটি অন্যতম প্রধান উৎস। এটি শরীরের জন্য অনেক বেশি প্রয়োজনীয় একটি উপাদান। তবে প্রতিটি খাদ্যেরই কিন্তু ভালো এবং খারাপ দুটি দিকই রয়েছে। ঠিক তেমনি করেই আমিষ খাওয়ার ক্ষেত্রেও কিছু সর্তকতা অবলম্বন করা শ্রেয়। আমিষ জাতীয় খাবার থেকে অতিরিক্ত প্রোটিনও দেহের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে।
  • অতিরিক্ত আমিষ জাতীয় খাদ্য খেলে ওজন বৃদ্ধির সমস্যাতেও ভুগতে দেখা যায়।
  • কিছু কিছু ক্ষেত্রে অতিরিক্ত আমিষ জাতীয় খাদ্য খাওয়ার কারণে শ্বাসনালীতেও চর্বি সৃষ্টি হতে পারে। যা একটি মানুষের জন্য খুবই ভয়ানক আকার ধারণ করতে পারে।
  • আমিষ জাতীয় খাদ্য অতিরিক্ত গ্রহণ করলে মন মেজাজ খিটখিটে হয়ে যায় বলে ধারণা করা হয়।
  • যেসব ব্যক্তিরা অতিরিক্ত আমিষ জাতীয় খাবার খায় নিরামিষ ভোজীদের তুলনায় তারা সব সময় একটু রগচটা ধরনের হয়ে থাকে। বা বলা যায় যে, এ সকল ব্যক্তিরদের রাগ একটু বেশি পরিমাণে হয়ে থাকে।
  • অতিরিক্ত আমিষ জাতীয় খাবার গ্রহণের কারণে কিছু কিছু ক্ষেত্রে মুখে দুর্গন্ধেরও সৃষ্টি হয়।
  • কিছু কিছু ক্ষেত্রে দেখা গেছে যে, অতিরিক্ত আমিষ খেলে তৃষ্ণা বাড়ে।

লেখকের মন্তব্য

আশা করি উপরোক্ত আলোচনার মাধ্যমে আপনারা আমিষ ও নিরামিষ খাবারের উপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত সবকিছু জানতে পেরেছেন। আজকের পোস্টটি যদি আপনাদের ভালো লেগে থাকে এবং এই পোস্ট সম্পর্কে কোন প্রশ্ন বা মতামত থাকে তাহলে আমাদের কমেন্ট বক্সে কমেন্ট করুন। এবং পোস্টটি শেয়ার করার মাধ্যমে আমিষ ও নিরামিষ খাবারের উপকারিতা সম্পর্কে সবাইকে জানার সুযোগ করে দিন।
ধন্যবাদ

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url